ঢাকা
৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৫:১২
logo
প্রকাশিত : ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৫

সাটুরিয়া উপজেলার শ্রেষ্ঠ পাঁচ জয়িতা

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

অর্থনৈতিকভাবে সাফল্য অর্জনকারী নারী :
ফারিহা মিম এশা তিন ভাই বোনের মধ্যে সবার বড়। ছেলে বেলা কেটেছে নানার বাড়িতে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেখাপড়া করা অবস্থায় বিয়ে হয়। অনেক প্রতিকূল পরিস্থিতিতে স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের অমতে ২০০৮ সালে কলেজে ভর্তি হয়। অনেক সংগ্রাম ও বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে চলছিলো ছাত্রজীবন ও বিবাহিত জীবন। ২০১০ সালে এইচএসসি পরীক্ষার সময় বড় মেয়ের জন্ম হয়। ২০১৫ সালে অনার্স পরিক্ষায় সাফল্য আসে। এর পর আর লেখাপড়া চালানো যায়নি।

২০১৮ সালে প্রবাসে বাবা মারা যাওয়ার পর বুঝতে পারে জীবনের আরও এক বাস্তবতা। মা ভাই বোনদের মুখে দুবেলা ভাত তুলে দেওয়ার জন্য একটা কিন্ডার গার্টেন স্কুলে যোগদান করেন। পাশাপাশি পরিবারের সহযোগিতা নিয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য বেকিং এর কোর্স করে বিজনেস শুরু করেন। সাটুরিয়া বাজারের জমজম টাওয়ারে একটি কেকের দোকান আছে। পাশাপাশি লামি-লামহা নামে তার একটি অনলাইন পেজ থেকে আয় হয়। একজন আত্মপ্রত্যয়ী নারী হিসেবে নিজেকে সফল উদ্যোক্তা মনে করেন। নিজের আয়ে নিজের পরিবার পরিচালনার পাশাপাশি বাবার পরিবারে আর্থিক সহযোগিতা করেন।

শিক্ষা ও চাকুরী ক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী নারী:
মুক্তা আক্তার তিন বোনের মধ্যে মেজো। তিন বোনের লেখাপড়ারে খরচ ও সংসার চালাতে হিমশিমে পড়তো তাদের চাকুরীজীবী বাবা। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর চার কিলোমিটার দূরে পায়ে হেঁটে হাই স্কুলে যেতে হতো। ২০০৮ সালে ফয়জুন নেছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস, এস, সি পাশ করে দরগ্রাম কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। লেখাপড়ার খরচ চালাতে বাবার অনেক কষ্ট হতো। এইচ, এস, সি পরিক্ষার পরই শিক্ষিত বেকার এক ছেলের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর শশুরের টাকায় লেখাপড়া করতে হতো। এতে শ্বশুর বাড়িতে অনেক অশান্তির সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে শ্বশুর বাড়ি ছেড়ে আলাদা জায়গায় থাকতে হয়। একদিকে লেখাপড়ার খরচ অন্যদিকে স্বামী চাকরীর জন্য টাকা জমা দিয়ে চাকরিও হয়নি,টাকাও ফেরত পাইনি। এই নিয়ে সংসারে আরও অশান্তি শুরু হয়। এভাবে অনার্স শেষ হয়। এরই মধ্যে চাকরির জন্য বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করা হয়। পরে পরিবার কল্যাণ সহকারি পদে চাকরি হয়। এক মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। মেয়ের বয়স ৭বছর। বর্তমানে আর্থিক অবস্থা ভাল। চাকরি জীবনে অনেক সংগ্রাম করতে হয়। স্বামী পাশে ছিলো বিধায় সফল নারী হিসেবে সকল বাধা অতিক্রম করতে পেরেছে। নিজেকে মানুষের সামনে সফল নারী হিসেবে পরিচয় দিতে পারছে।

সফল জননী নারী:
রাবিয়া বেগম একজন সফল জননী নারী। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার পূর্ব কুষ্টিয়া গ্রামের জন্ম। ১৯৮৫ সালে বিয়ে হয়। স্বামী ব্যবসা করার পাশাপাশি কৃষি কাজও করত। ৪ সন্তানের মা। পরিবারে মোট সদস্য ছিল ১১ জন। স্বামী এবং তার ভাইরা সবাই আলাদা হয়ে যায়। হঠাৎ দূর্ঘটনায় স্বামীর একটি পা নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে সংসার এ অভাব দেখা দেয়।

৩ ছেলে ও ১ মেয়ে অনেক মেধাবী ছিল। কিছুদিন পর বাড়ির পাশে একটি কড়াই কারখানা কাজ শুরু করেন রাবিয়া। পাশাপাশি বাড়িতে ছাগল পালন শুরু করেন। এভাবে পরিশ্রম করে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শেখান।

বড় ছেলে মাস্টার্স শেষ করে ব্রাক অফিসে ম্যানেজার পদে চাকরি করে। দ্বিতীয় ছেলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার শেষ করে গাজীপুর একটি পোষাক কারখানায় ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছে। তৃতীয় ছেলে বিএ পাশ করে ব্যবসা করছে। আর চতুর্থ ছেলে বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র পাশাপাশি ঢাকাতে ব্যবসা করছে। বর্তমানে তাদের নিয়ে অনেক সুখে আছেন তিনি।

নির্যাতনের বিভীষিকা মুছে ফেলে নতুন উদ্যোমে জীবন শুরু করেছে যে নারী:
মনোয়ার বেগমের বিয়ে হয়েছিলো ১৯৯৯ সালে কুমিল্লায়। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রী দুজনেই গাজিপুরে একটি স্পিনিং মিলে চাকুরী করতো। ২০০৪ সালে এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। কিছুদিন পর স্বামী পরকিয়ায় জড়িয়ে ২য় বিয়ে করে। পরিবারে শুরু হয় অশান্তি। ২০০৬ সালে ডিভোর্স হয়ে যায়। ছেলের বয়স তখন মাত্র ২ বছর। বাধ্য হয়ে প্রথমে আকিজ টেক্সটাইলে পরে আশুলিয়ায় একটি ইন্ড্রাটিতে চাকুরী নেয় মনোয়ারা। স্বামী পরিত্যাক্তা জেনে অনেকেই কু-প্রস্তাব দেয়। সকল প্রতিকূলতা অতিক্রম করে আশুলিয়ায় একটি কাপড়ের দোকান দেয়। একমাত্র ছেলেকে আশুলিয়ায় একটি স্কুলে ভর্তি কষ্টে উপার্জিত টাকা দিয়ে ছেলেকে পড়াশোনা করাতে থাকে। ছেলে এইচএসসি পাশ করে। ধীরে ধীরে অবস্থার পরিবর্তন হয়। এখন নিজের বাড়িতে হাঁসমুরগী পালন, সবজি চাষ, সেলাইয়ের মাধ্যমে উপার্জন করে সংসার পরিচালনা করছে। ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে দ্বিতীয়বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়নি।

সমাজ উন্নয়নে অসামান্য অবদান রেখেছেন যে নারী :
মনোয়ারা বেগম, ধানকোড়া ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা আসনের ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য। ১৬ বছর বয়সে বাবা-মা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিবাহ দেয়। বাল্য বিবাহের কারণে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়া অবস্থায় লেখা পড়া বন্ধ হয়ে যায়। ২০ বছর বয়সে ৩ সন্তানের জননী হয়। স্বামী অন্যত্র চাকুরী করার কারণে সংসারের হাল ধরতে হয়। স্বামীর জমিজমা দেখাশুনার পাশাপাশি জনসেবা মূলক কাজ করতেন। কেউ অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া, দরিদ্র মানুষদের আর্থিক সাহায্য করা সহ বিভিন্ন সেবা মূলক কাজ করতেন। আমার সেবা মূলক কাজ দেখে এলাকার মানুষ ওয়ার্ড মহিলা সদস্য নির্বাচিত করে। পরপর ৩ বার মহিলা সদস্য নির্বাচিত হয়ে এলাকার যাতায়াত অনুপযোগী রাস্তা মেরামত , কালভার্ট নির্মান করেন। মা ও শিশু সহায়তা প্রদান, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করেন।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram