

নির্বাচন কমিশন (ইসি) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। আগামী ৭ ডিসেম্বর ভোটের তারিখসহ নির্বাচনের অন্যান্য সময়সূচি নির্ধারণের জন্য বৈঠকে বসতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। সাধারণত নির্বাচন কমিশনের বৈঠকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল নির্ধারণের দিনই তা ঘোষণা করা হয়ে থাকে। কিন্তু এবার ৭ ডিসেম্বর তফসিল নির্ধারণের দিন এ ঘোষণা না-ও হতে পারে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার ৮ থেকে ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে যেকোনো তারিখে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রত্যাশিত এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারেন। গতকাল মঙ্গলবার নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচন কমিশনকে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে রোজা শুরুর আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছে। নির্বাচন কমিশনও ভোটগ্রহণের ৬০ দিন আগে তফসিল ঘোষণা করতে প্রতিশ্রুত।
সে ক্ষেত্রে আগামী সপ্তাহে কমিশনকে তফসিল ঘোষণা করতেই হবে। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে প্রস্তুত। গত ২৯ নভেম্বর রাজধানীতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের মক ভোটিং পরিদর্শনে এসে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে ঘোষণা করা হবে।
গতকাল আরেক নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সাংবাদিকদের বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের ৮ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে।
এ ক্ষেত্রে ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে এক-দুই দিন পরে কিংবা ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে এক-দুই দিন আগেও হতে পারে। অর্থাৎ মাঝামাঝি কোনো তারিখে ভোটের তারিখ নির্ধারণ হতে পারে।
ফেব্রুরুয়ারির ৮ তারিখ রবিবার এবং ১২ তারিখ বৃহস্পতিবার। সে হিসেবে মঙ্গলবার বা ১০ তারিখের দিকে সংসদ নির্বাচন হতে পারে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।
এ ছাড়া ভোট গ্রহণের সময়সীমা এবং গোপন কক্ষ কিছুটা বাড়ানোর কথা ভাবছে ইসি।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, যেহেতু গণভোট ও সংসদ নির্বাচন এক দিনে হবে, তাই গোপন কক্ষের সংখ্যা বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। আবার ভোটের সময় এক ঘণ্টা বাড়িয়ে ৯ ঘণ্টা করা হতে পারে। এ জন্য সকাল-বিকেলে দুই দিকেই সময় বাড়ানোর কথা ভাবা হচ্ছে। সাধারণ সকাল ৮ থেকে ভোট শুরু হয়, সেটি সাড়ে ৭টায় শুরু হতে পারে। আবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হয়, সেটি সাড়ে ৪টা করার কথা ভাবা হচ্ছে।
আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মশালা স্থগিত : এদিকে আজ আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সমন্বিত ভূমিকা’ শীর্ষক দিনব্যাপী কর্মশালা স্থগিত করার কথা জানিয়েছে সরকার। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এসংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. শিমুল আকতার স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে যে আগামীকাল (বুধবার) রাজধানীর চীন মৈত্রী সম্মেলনকেন্দ্রে ‘সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় সমন্বিত ভূমিকা’ শীর্ষক এই প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে কর্মশালাটি অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হলো।
এ বিষয়ে আব্দুর রহমালেন মাছউদ বলেন, ওই কর্মশালায় আমি আমন্ত্রিত ছিলাম। আজই (মঙ্গলবার) বাতিলের নোটিশ পেয়েছি। কর্মশালায় সারা দেশের ডিসি, এসপি, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, সব চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, প্রতি জেলা থেকে একজন করে ইউএনও ও ওসির যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কী কারণে কর্মশালাটি স্থগিত হয়েছে তা জানানো হয়নি। বলা হয়েছে অনিবার্য কারণে।
এই কর্মশালা স্থগিত হওয়া নিয়ে নানা ধরনের গুঞ্জন চলছে। তবে নির্বাচন কর্মকর্তাদের কারো কারো ধারণা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতাকেন্দ্রিক যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চলছে, সে কারণে সারা দেশের সম্ভাব্য পরিস্থিতির বিষয়টি বিবেচনায় রেখে এই সময়ে সরকার চাইছে না মাঠ পর্যায়ের এ কর্মকর্তাদের একসঙ্গে ঢাকায় আনতে। এই কর্মশালা তফসিল ঘোষণার পরও হতে পারে।

