

শিক্ষকতার জগতে নজরকাড়া এক ব্যক্তিক্রমধর্মী শিক্ষকের নাম হলোঃ মহম্মদ দানীউল হক। বলা অপরিহার্য যে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের এই অধ্যাপকের স্বাতন্ত্র্যমন্ডিত ও ব্যক্তিত্বময় আলোর দ্যূতি বিচ্ছুরিত ছিল দূরে বহুদূরে। তাই তিনি ভার্সিটির সকল বিভাগের বৃত্তচক্রের বাইরে সবারই মনশ্চক্ষে দৃশ্যমান ছিলেন। এটা সর্বজনবিদিত যে, আধুনিক বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অঙ্গনে বিশেষ করে ভাষা বিজ্ঞানের পরিমন্ডলে তিনি ছিলেন দৃষ্টিনন্দিত এক ব্যক্তিত্ব। একজন শিক্ষকের কাছে ছাত্র-ছাত্রীরা যে একাডেমিক কার্যক্রম প্রত্যাশা করে মহম্মদ দানীউল হক তা দিয়েছেন বিভিন্ন মাত্রায়।
এও বলা সঙ্গত যে, অন্যান্য বিষয় যেমন পদার্থ, রসায়নের সংজ্ঞা, সূত্র, প্রতীক, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, কার্যকারণ ইত্যাদি হলেই হলো। কিন্তু ভাষা ও সাহিত্য? এটা হলেই হলো না- এটা বহুধা বিভক্ত। এর ভেতরের দিক যেমন আছে তেমনি আছে এর বাইরের দিকও। এমনকি যিনি পড়ান তিনিও এর বাইরে নন। তাঁর উচ্চারণ শব্দচয়ন বর্ণনা-বিবৃতি, ভাষারীতি-স্টাইল এসবও ধর্তব্য। ক্লাসের বাইরেও তাঁর স্থিতধী উপস্থাপনা স্মিতহাসির স্ফূরণ, বিষয়বস্তুর সাথে চোখ মুখের ইশারা ইঙ্গিতময় দ্যোতনা সব মিলিয়ে এক অপূর্ব প্রকাশÑÑ তাঁরই নাম মহম্মদ দানীউল হক। সত্যিকার অর্থে বাংলার ইশারা ভাষা (ঝরমহ খধহমঁধমব) তাঁর হাত ধরে এগিয়ে চললে অতি তাড়াতাড়িই সর্বস্তরে ইশারা ভাষা চালু করা যেতো। এ-ই শব্দ দূষণের যান্ত্রিকযুগে হাসপাতালে, কলে-কারখানায়, পরিবহণে, পরীক্ষার হলে এবং বহু জায়গায় ইশারা ভাষার ব্যবহার করা যেতো।
ধ্বনি বিজ্ঞান পড়াতে গিয়ে তিনি প্রায়ই আমেরিকার রেড ইন্ডিয়ানদের ইশারা ভাষার উদাহরণ দিতেন। যারা রোগে শোগে জ্বরের সময় শুধু ইশারা ইঙ্গিতে কথা বলতো। তারা অসুখ সেরে গেলেও ঐ ইশারা ভাষা বলতো। এ চর্চা অব্যহত রাখত। তাই তাদের ইশারা ভাষা হয়ে উঠেছে সমৃদ্ধ। সাহিত্যের দৃরূহ ও জটিল বিষয়গুলো তিনি সহজ সরল লিকুইড করে লেখালেখি করতেন এমনই একটি বই হলোঃ “অনুবেদন”, এছাড়াও “ভাষা বিজ্ঞানের কথা” এবং “ভাষা বিজ্ঞানের প্রবন্ধ” আরো দুটো বই লিখে বিরল কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর একটি বড় প্রস্তাব ছিলো: রাষ্ট্রীয়ভাবে “বাংলা ভাষা পরিকল্পনা” বাস্তবায়ন করা। আমাদের দেশে বিভিন্ন স্তরে বাংলা, ইংরেজি মাধ্যমে নানা ভাবে শিক্ষা দিতে গিয়ে কোন কোন ক্ষেত্রে লেজে গোবরে একাকার করছে। এটা তিনি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়েছেন। তাঁর বর্ণাঢ্য কর্মমুখর এবং সৃজনশীল লেখার জন্য সকলেই আমরা তাঁকে রাষ্ট্রীয়ভাবে (মরণোত্তর) সম্মাননা ও পুরস্কৃত করার জন্য অনুরোধ করছি।
প্রিন্সিপাল মোঃ নুরুল ইসলাম
পীস ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ভার্সন স্কুল
কালিয়াকৈর, গাজীপুর।

