ঢাকা
১৮ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ২:১১
logo
প্রকাশিত : জুন ১৮, ২০২৫

তারেক রহমান ক্রমে নিজেকে নিয়ে যাচ্ছেন ভিন্ন উচ্চতায়

কথা, কাজ ও সিদ্ধান্তে প্রতিনিয়ত এক উচ্চতা থেকে অন্য উচ্চতায় পৌঁছে যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বিশ্বসভ্যতা ও গণতন্ত্রচর্চার তীর্থভূমি ব্রিটেনেও ফেলেছেন তাঁর উচ্চতার পদচিহ্ন। সেখানে তিনি রপ্ত করেছেন রাজনৈতিক সৌন্দর্য। দেশের রাজনীতির মৃদুমন্দে রাখছেন তীক্ষ দৃষ্টি এবং তথ্যের আপডেটে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন।

নিচ্ছেন সময়োপযোগী একেকটি সিদ্ধান্ত। সমান্তরালে একের পর এক আকাঙ্ক্ষিত জাতীয় ঐক্যের ঐকতানে শাণ দিয়ে যাচ্ছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা

সুদূরে অবস্থান করেও দলকে নির্দেশনার পাশাপাশি তাঁর কিছু পদক্ষেপ প্রথাগত রাজনীতির দক্ষ নেতাদের চমকে দিচ্ছে। এতে কারো মধ্যে গোসসা, আবার কারো মধ্যে ঈর্ষাও জাগছে।

ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বহুল আলোচিত লন্ডন বৈঠকের আবহ স্থানিক রাজনীতিতে এখনো সঞ্চারিত রয়েছে। বৈঠকটিতে তাঁদের কিছু সংলাপ ও টুকরো কথা মূলধারার গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও ভাইরাল।

ড. ইউনূসকে তাঁর বলা, ‘আম্মা আপনাকে সালাম দিয়েছেন।’ জবাবে ড. ইউনূসের ‘তিনি (খালেদা জিয়া) এক অসাধারণ মানুষ। তাঁকেও আমার সালাম।’ বৈঠকের সূচনায় এটি দুজনের মধ্যে বিনিময় হওয়া সংলাপের দুটি টুকরো বাক্য। বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে হাস্যোজ্জ্বল তারেক রহমান অপেক্ষমাণ সাংবাদিক ও স্লোগানমুখর সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘বৈঠকটি ছিল ঐতিহাসিক।
…আমাদের দুজন মুরব্বি আছেন—বেগম খালেদা জিয়া ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁরা জাতিকে নির্দেশনা দেবেন।’
এখানে প্রজ্ঞার সঙ্গে রয়েছে শব্দ ও বাক্যে উপলব্ধির অনেক উপাদান। রয়েছে বিশ্লেষণের জোগান। তারেক রহমান বৈঠকে ড. ইউনূসকে বই ও কলম উপহার দিয়েছেন। এই উপহারে জ্ঞানচর্চা ও শিক্ষার ফোকাস প্রতিভাত। আগামী নির্বাচনের তারিখ ঘিরে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির মধ্যে দেখা দেওয়া উত্তাপের মাঝে বৈঠকটি তপ্ত মাঠে বৃষ্টি ঝরিয়েছে।

বৈঠকের পর যৌথ ঘোষণা লন্ডন, পল্টন-গুলশান মিলিয়ে ঢাকার উত্সুক মহলকে বড় রকমের বার্তা দিয়েছে, যা ছিল সময়ের দাবি। রাজনীতির জটিল-কুটিল বাঁকে গলা কাঁপিয়ে বা খিঁচুনি দিয়ে বা আস্তিন গুটিয়ে তেজি বক্তৃতায় দেশের চিন্তাশীল মানুষ অনেক দিন থেকে ত্যক্তবিরক্ত। এই বাস্তবতা বোঝা বোধ-বুদ্ধির বিষয়। তারেক রহমান তা আয়ত্ত করেছেন আরো আগেই। ছোট ছোট শব্দ ও বাক্যে বড় বড় বার্তা তিনি দিয়ে আসছেন। কখনো কখনো প্রতিপক্ষের হিংসাত্মক-নোংরা বাক্যবাণের জবাবও এড়িয়ে যান। নামও মুখে নেন না। একদিকে দেশে মা বেগম খালেদা জিয়ার প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা ও সহজাত ঔদার্য রাজনীতিকে সৌন্দর্য দিয়েছে; অন্যদিকে বিদেশ থেকে ছেলে তারেক রহমানের নিয়মিত দলীয় সিদ্ধান্ত ও নির্দেশ দলকে করছে সমৃদ্ধ। রাজনীতিকে দিয়েছে মহিমা, সেই সঙ্গে নতুনত্বে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা।

চোখ-কান খোলা রাখা মহলের কাছে তারেক রহমানের উচ্চতা বিশেষভাবে মালুম হয় ৫ আগস্টের পূর্বাপর গড়ে ওঠা জাতীয় ঐক্যের ম্যাজিকেও। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনার ছাত্রসমাজের সঙ্গে তারেক রহমানের নিবিড় যোগাযোগ দলের অনেকের কাছে ছিল অজানা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের তেজোদীপ্ত রেখে দেশকে গণ-অভ্যুত্থানমুখী রাখতে তাঁর কৌশলী পদক্ষেপ গ্রহণ চলছিল সন্তর্পণে। কেউ যেন ঐক্যে ফাটল ধরাতে না পারে, সেদিকে সজাগ থাকার তাগিদ আসছিল প্রতিনিয়ত। এ অভিযাত্রায় কঠিনেরে জয় করে আরো কঠিনের পথে আগুয়ান থেকেছেন তিনি। একই সঙ্গে দলের নির্দেশনা বা সিদ্ধান্ত খেলাপিদের বিরুদ্ধে নিয়েছেন নানা মাত্রার পদক্ষেপ। অপরাধদৃষ্টে বহিষ্কার, পদস্থগিত, সতর্কতাসহ বিভিন্ন শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কিছুদিন পর বিজয়ী-বিজয়ী ভাবের মধ্যেই ৮-৯ মাস আগে ‘ক্ষমতায় যাওয়া সহজ নয়, আগামী নির্বাচন হবে ইতিহাসের অন্যতম কঠিন পরীক্ষা’—তারেক রহমানের এই বার্তাটি দুর্বোধ্য ঠেকেছে বিএনপির অনেকের কাছে। কারো কারো বুঝতে লেগেছে কয়েক মাস। তারেক রহমান নিজেকে ক্রমে এমন এক উচ্চতায় নিতে সক্ষম হয়েছেন বলেই তাঁর কথায় এই মাহাত্ম্য। বাচনে-বচনে এবং রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাঁর উচ্চতার ছাপ সম্প্রতি আরো দৃশ্যমান।

তাঁর ‘ভোটের অধিকার নিশ্চিত হলে কোনো দল নিষিদ্ধ করার দায়ভার রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে না’—বক্তব্যটিও বোদ্ধামহলকে রীতিমতো অবাক করেছে। ‘ভোটাধিকার নিশ্চিত করা গেলে নিশিরাতে ভোট বা ডামি, স্বামী, আমি প্রার্থীর পথ রুদ্ধ হয়ে যাবে’—এ কথা মৃদুস্বরে নয়, চড়া গলায় বলেছেন তারেক রহমান। জনগণের আদালত এবং রাষ্ট্রের আদালত—দুটিকে কার্যকর করা গেলে রাষ্ট্র ও রাজনীতির উল্লেখযোগ্য গুণগত সংস্কার নিশ্চিত হবে—এমন মন্তব্যও করেছেন তিনি। তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, যেকোনো ফৌজদারি অপরাধের বিচার হতে হবে রাষ্ট্রীয় আদালতে। কোনো ব্যক্তি বা দলের রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ধারণ হবে রাজনীতির মাঠে। জনতার আদালতে বিচারের সংস্কৃতি চালু হলে একটি রাজনৈতিক সংস্কার হয়ে যাবে। এ ছাড়া দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেই যাচ্ছেন আত্মবিশ্বাসী হয়ে জনবিচ্ছিন্ন না হতে। মানুষ অপছন্দ করে এমন কাজ না করতে। আওয়ামী লীগের পরিণতি থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহবান তো জানিয়েই যাচ্ছেন।

পতিত সরকারের অবিরাম অপপ্রচার, সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রীর নিয়মিত গালমন্দ, ভেংচি, খিঁচুনির জবাবে না গিয়ে তারেক রহমান এগিয়েছেন দৃপ্ত পদক্ষেপে, যা ক্রমে তাঁকে সমৃদ্ধি দিয়েছে। স্বতন্ত্র উচ্চতায় দিয়েছে ভিন্ন পরিচিতিও। খাদের কিনার থেকে যা দলকে টেনে তোলার শক্তিও দিয়েছে তাঁকে। তুমুল প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও কিভাবে অটল-অবিচল থেকে ক্রমে উচ্চতায় ওঠা যায়, সেই ক্ষেত্রে পাঠপঠনের মতো উদাহরণ হয়ে উঠেছেন তারেক রহমান। বিশেষ করে তাঁর দলের তৃণমূলের কাছে হয়ে উঠেছেন ছায়াসঙ্গী। ২০১৬ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কারাবন্দি হওয়ার পর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন তিনি। দেশে ফিরতে মানা, কথা বলতে মানা, কথা প্রচারে আদালতের নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও তিনি এগিয়েছেন হাত-পা বাঁধা সাঁতারু হয়ে। তাঁর দৃঢ়তার সামনে নির্যাতকদেরই পরাস্ত হতে হয়েছে নিদারুণভাবে। তারেক রহমানের দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ভূমিকা জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার সফল অভ্যুত্থানের ক্ষেত্রই তৈরি করেনি; অভ্যুত্থান-পরবর্তী স্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটও তৈরি করেছে।

সরকার পতনের পর প্রতিহিংসাপরায়ণতায় পরিস্থিতি আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠার আশঙ্কা করেছেন অনেকে। তারেক রহমান সেখানে ছিটিয়েছেন শান্তির বারতা। দল-মত-নির্বিশেষে সবাইকে আহবান জানিয়েছেন শান্ত থাকতে। ফ্যাসিস্টদের প্রতি মারমুখী না হতে। দায়িত্বশীলতার মাপকাঠিতে অন্তর্বর্তী সরকারের চলার পথ সুগম করতেও তাঁর নানামুখী পদক্ষেপ রাজনীতির অভিধানে এরই মধ্যে জায়গা করে নিয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হতাহতদের পরিবারের নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছেন তারেক রহমান। আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি আহতদের সুচিকিৎসার সর্বশেষ খবর নিচ্ছেন নিয়মিত। এর আগে প্রতিটি বন্যা, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, করোনা মহামারির সময়ও তাঁর এ ধরনের পদক্ষেপ ছিল, যা অনেকের জানা ও ধারণার বাইরে। বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষা ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে তাঁর সহায়তা এখনো অনেকের অজানা। এসব জানেন সংশ্লিষ্ট কজন শুধু। সময় ও পরিস্থিতির অনিবার্যতায় ইতিহাসের সঙ্গে এখন বাংলাদেশের বর্তমানও আবর্তিত হচ্ছে তারেক রহমানকে ঘিরে।

ওয়ান-ইলেভেনের সময় ২০০৭ সালের ৭ মার্চ গ্রেপ্তার করা হয় তারেক রহমানকে। গ্রেপ্তারের পর চালানো হয় অমানুষিক নির্যাতন। আর রচনা করা বদনাম-কলঙ্ক ছিল বোনাস। দীর্ঘ ১৮ মাস কারান্তরিন থাকার পর জামিনে মুক্তি পেয়ে চিকিৎসার জন্য ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন। সেই থেকে এখনো লন্ডনে নির্বাসনে তিনি। সেখান থেকেই দল পরিচালনা করছেন। অনেকবার দলটিকে ভেঙে টুকরা টুকরা করার রাষ্ট্রীয় মহা-আয়োজন চলেছে। সফল তো হয়ইনি, বরং বিএনপি হয়েছে আরো টেকসই।

এই দীর্ঘ সময়ে তিনি যা হারিয়েছেন, তা আর ফেরত পাওয়ার নয়। সহোদর ভাই আরাফাত রহমান কোকোর জীবনাবসান হয়েছে। মা বেগম খালেদা জিয়া কয়েক দফায় পৌঁছেছিলেন জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানও এই পুরোটা সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। শুধু তারেক রহমানের স্ত্রী হওয়ার অপরাধে ডা. জুবাইদা রহমানকে বহুভাবে অপদস্থ করেছে পতিত সরকার। ডা. জুবাইদা রহমান বাংলাদেশের চিকিৎসাশাস্ত্রের অত্যন্ত মেধাবী একজন শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁর পরীক্ষার ফল চিকিৎসাশাস্ত্রের অনেক শিক্ষার্থীর কাছে ছিল ঈর্ষণীয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ডিস্টিংকশনসহ সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে এমবিবিএস পাস করা জুবাইদা রহমান বাংলাদেশের অত্যন্ত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য। তাঁর বাবা রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খান ছিলেন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রধান ও সাবেক মন্ত্রী। মা সৈয়দা ইকবালমান্দ বানুর সমাজসেবায় উপকারভোগী অনেকে। তাঁর শ্বশুর জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক। শাশুড়ি বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী।

জুবায়দা রহমানকে শুধু চাকরিচ্যুত নয়, মামলা-মোকদ্দমা নয়, সম্মানহানির সব ব্যবস্থা করেছিল পতিত সরকার। এমন কঠিন সময়েও টলেননি, মচকাননি, ভাঙেনওনি তারেক রহমান। কারো কারো বিশ্লেষণে প্যারিসের নির্বাসন জীবন খোমেনিকে বিশ্বের কাছে তাঁর বক্তব্য আরো সহজে পৌঁছে দিয়েছে। লন্ডনের নির্বাসন তারেক রহমানকেও করেছে অপ্রতিরোধ্য। দেশের মিডিয়া তাঁর বক্তব্য প্রচার করতে না পারলেও ভিডিও কনফারেন্সিং, সোশ্যাল মিডিয়া ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার দেশের আনাচকানাচে তৃণমূল থেকে জাতীয় পরিসরে তাঁকে আরো দীপ্তিমান করেছে। দলের শক্তিকে করেছে আরো যূথবদ্ধ।

লেখক : সাংবাদিক-কলামিস্ট; ডেপুটি হেড অব নিউজ, বাংলাভিশন

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram