যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের পররাষ্ট্র সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান সিনেটর জিম রিশ (রিপাবলিকান-ইডাহো) মঙ্গলবার একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটির মনোনয়ন শুনানিতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন। পররাষ্ট্র সম্পর্কিত এই শুনানিতে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পল কাপুরসহ অন্যান্য দেশে বিভিন্ন পর্যায়ে রাষ্ট্রদূত মনোনয়ন এবং তাদের করণীয় সম্পর্কে দিক নির্দেশনা দেন তিনি। পল কাপুরের উদ্দেশে তিনি বলেন, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে আপনার কাজ হবে একটি বিস্তৃত ও চ্যালেঞ্জিং অঞ্চলের সঙ্গে। এই অঞ্চলের অনেক দেশ আমাদের সঙ্গে কাজ করতে চায়। আমাদের উচিত সেই আগ্রহকে কাজে লাগিয়ে গভীরতর অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তবে একই সঙ্গে, চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও আঞ্চলিক নিরাপত্তার হুমকি নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করতে হবে, বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ায়। ভারত-পাকিস্তান সাম্প্রতিক সংঘাত আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে এবং এটি দেখিয়েছে যে, এই অঞ্চলে আমাদের সন্ত্রাসবাদবিরোধী সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র উভয় দেশের সঙ্গে নিরাপত্তা স্বার্থ শেয়ার করে এবং তাদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখা জরুরি। এ খবর দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন রিলেশন্স কমিটি। বিভিন্ন পর্যায়ে যাদেরকে মনোনয়ন দিয়ে এই শুনানি হয় তার মধ্যে আছেন- রাষ্ট্র বিভাগের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জ্বালানি ও পরিবেশ বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি হিসেবে জ্যাকব হেলবার্গ, ইউরোপীয় ইউনিয়নে মার্কিন প্রতিনিধি হিসেবে অ্যানড্রু পাজডার, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে পল কাপুর, মার্কিন আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অর্থায়ন কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে বেঞ্জামিন ব্ল্যাক এবং ফিনল্যান্ডে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে হাওয়ার্ড ব্রোডি।
শুনানিতে চেয়ারম্যান রিশ তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের সঙ্গে উপস্থিত থাকার জন্য মনোনীত ব্যক্তিদের ধন্যবাদ জানাই এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, এই গুরুত্বপূর্ণ পদে দেশের সেবা দেওয়ার জন্য তাদের ও তাদের পরিবারকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা গর্বিত যে, আমরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ৩৩ জন মনোনীত ব্যক্তিকে এই কমিটির মাধ্যমে অগ্রসর করেছি এবং আশা করি আপনাদের মনোনয়নও একইভাবে অগ্রসর হবে। আমরা আগের প্রশাসনের তুলনায় দ্রুত গতিতে এগোচ্ছি, যা সম্ভব হয়েছে প্রেসিডেন্টের সহযোগিতা ও তার সরাসরি আগ্রহে।
মিস্টার হেলবার্গ, আপনি আন্ডার সেক্রেটারি অফ স্টেট ফর ইকোনমিক গ্রোথ হিসেবে এমন একটি অবস্থানে থাকবেন যেখানে বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বী- বিশেষত চীনের সঙ্গে, প্রতিযোগিতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে কাজ করতে হবে। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি উদীয়মান প্রযুক্তি নিয়ন্ত্রণের প্রতিযোগিতা, অপ্রত্যাশিত বাণিজ্য অনুশীলন ও অর্থনৈতিক জবরদস্তিমূলক আচরণের মাধ্যমে বৈশ্বিকভাবে মার্কিন নেতৃত্বকে হুমকি দিচ্ছে। আগের প্রশাসন মার্কিন অর্থনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন আপনার দায়িত্ব হবে, যুক্তরাষ্ট্রের সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা নিশ্চিত করা, যার মধ্যে শক্তিশালী জ্বালানি ও প্রযুক্তি কৌশল রয়েছে। আমি আপনার পরিকল্পনার কথা শুনতে আগ্রহী।
মিস্টার পাজডার, গত তিন বছরে পুতিনের আগ্রাসন ইউরোপে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা সংকট তৈরি করেছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই সংঘাতের অবসানে কঠোর পরিশ্রম করছেন, তবে আমাদের ইউরোপীয় মিত্রদের নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধিতে চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে রাষ্ট্রদূত হিসেবে, আপনার কাজ হবে আমাদের ঘনিষ্ঠ মিত্রদের সঙ্গে কঠিন আলোচনা করা যাতে তারা রাশিয়ার হুমকির মোকাবেলায় প্রস্তুত হয়। ন্যাটোতে আপনার সমকক্ষদের সঙ্গেও আপনাকে কাজ করতে হবে যাতে ইউরোপীয় নীতিতে মার্কিন নিরাপত্তা স্বার্থ প্রতিফলিত হয়। মনে রাখবেন, ইউরোপের নিরাপত্তা বিনিয়োগের সুবিধা আমাদের সমগ্র মিত্র জোটকে পেতে হবে, শুধুমাত্র ইউরোপকে নয়। আমি আশা করি আপনি ইউরোপীয় মিত্রদের একটি শক্ত বার্তা পৌঁছে দেবেন- আমেরিকা একটি নির্ভরযোগ্য অংশীদার, তবে এটি কোনো এটিএম নয়।
এরপরই তিনি দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত পল কাপুরের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।
তিনি বলেন, আফগানিস্তানে ব্যর্থতাগুলি ঢাকতে বাইডেন প্রশাসনের প্রচেষ্টা দেশটিতে নিপীড়ন ও সন্ত্রাসবাদের হুমকিকে উপেক্ষা করেছে। এই ধারা পরিবর্তন ও আমেরিকানদের সুরক্ষিত রাখার দায়িত্ব এখন আপনার ওপর পড়বে।
মিস্টার ব্ল্যাক, আপনি জানেন যে চীনের অর্থনৈতিক আগ্রাসনের মোকাবেলায় আমাদের অন্যতম কার্যকর হাতিয়ার হলো- আমেরিকান উদ্ভাবনী শক্তিকে ব্যবহার করে তা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে পৌঁছে দেওয়া, যা আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অর্থায়ন কর্পোরেশনের মাধ্যমে সম্ভব। কংগ্রেস এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে যৌথভাবে প্রতিষ্ঠা করেছিল, এবং এটি ইতিমধ্যেই মার্কিন কৌশলগত ও অর্থনৈতিক স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
তবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এজেন্সিটি তার দ্বৈত ম্যান্ডেট- উন্নয়ন ত্বরান্বিত করা ও জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ খাতে বিনিয়োগ- সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে ব্যর্থ হয়েছে। এই কারণে, র্যাংকিং মেম্বার এবং আমি একটি নতুন আইন নিয়ে কাজ করছি যাতে ডিএফসি কৌশলগত ও উন্নয়নমূল্য উভয়ই সরবরাহ করতে পারে। আমরা চাই এজেন্সি আরও প্রতিভাবান কর্মী আকর্ষণ করুক, ঝুঁকি গ্রহণে সাহসী হোক, এবং আরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করুক। আপনি যদি নিশ্চিত হন, তাহলে আপনি ডিএফসির নেতৃত্ব নেবেন এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। আমি আপনার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী।
মিস্টার ব্রোডি, রাষ্ট্রদূত হিসেবে আপনি একটি কৌশলগত অঞ্চলে কাজ করবেন, যেটি ন্যাটোর সীমানা ঘেঁষা রাশিয়ার পাশে। ফিনল্যান্ড তাদের জিডিপির ভালো একটি অংশ প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় করে এবং তাদের প্রতিরক্ষা শিল্প শক্তিশালী। আমরা এই অবদানের প্রশংসা করি, তবে অন্যান্য দেশের মতো ফিনল্যান্ডও আরও কিছু করতে পারে। কারণ তাদের কৌশলগত অবস্থান বলছে, বাল্টিক সাগরে রাশিয়ার হাইব্রিড অপারেশন প্রতিরোধে, ছায়া নৌবহরের ঝুঁকি মোকাবেলায় এবং আর্কটিক অঞ্চলে রাশিয়া ও চীনের সম্প্রসারণ ঠেকাতে ফিনল্যান্ডকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।
মিস্টার ব্রোডি, আপনি কীভাবে ফিনল্যান্ডের সঙ্গে কাজ করে রুশ আগ্রাসন মোকাবেলা ও মার্কিন নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষা করবেন, তা শুনতে আমি আগ্রহী। আমার বিশ্বাস, আপনি দেখবেন- ফিনল্যান্ড একটি আগ্রহী অংশীদার। আমরা অনেকেই তাদের ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করতে কঠোর পরিশ্রম করেছি এবং এখন তারা সদস্য। রাশিয়ার সঙ্গে তাদের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে, তাই তাদের সঙ্গে কাজ করা হবে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।
এই সময়টা বৈদেশিক নীতির জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং। তবে একই সঙ্গে উত্তেজনাপূর্ণ। নিশ্চিতভাবেই আপনারা যে কাজ করবেন তা ইতিহাসের পাতায় বহু বছর ধরে লেখা থাকবে। আমি অপেক্ষায় আছি আপনাদের কাজ দেখার- যা যুক্তরাষ্ট্রকে আরও নিরাপদ ও সমৃদ্ধ করবে। আপনাদের ও আপনাদের পরিবারকে ধন্যবাদ এই দায়িত্ব গ্রহণের ইচ্ছার জন্য এবং আজ এখানে থাকার জন্য।