ঢাকা
১৭ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৫:৫৮
logo
প্রকাশিত : মে ১৭, ২০২৫

বাংলাদেশ বাদ দিয়ে ‍সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করতে নতুন প্রকল্প ভারতের

বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়েও। বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে যোগাযোগের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় ভারত এখন নতুন করে মিয়ানমার হয়ে সমুদ্রপথে বিকল্প সংযোগ প্রতিষ্ঠার পথে এগোচ্ছে।

ভারতের ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেডের (এনএইচআইডিসিএল) একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এ তথ্য জানিয়েছেন। ওই কর্মকর্তা এই প্রকল্পটিকে ‘জবাব’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। গত মার্চে বেইজিং সফরকালে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, উত্তর-পূর্ব ভারত ‘ভূবেষ্টিত।’ তিনি আরও বলেছিলেন, এই অঞ্চলের জন্য ঢাকা ‘মহাসাগরের (প্রবেশের) একমাত্র অভিভাবক।’

ভারতের সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, মেঘালয়ের শিলং থেকে আসামের শিলচর পর্যন্ত ১৬৬.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি চার লেনের মহাসড়ক নির্মাণের প্রস্তাব করেছে ভারত সরকার। এটি এনএইচ-৬ মহাসড়কের অংশ হিসেবে নির্মিত হবে। শিলং থেকে শুরু হয়ে এই সড়কটি যাবে পাঁচগ্রাম পর্যন্ত। প্রকল্পটি ভারতের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাস্তবায়ন করছে ন্যাশনাল হাইওয়েজ অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন লিমিটেড। ২০৩০ সালের মধ্যে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে মিয়ানমারে ইতোমধ্যে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে কালাদান মাল্টিমোডাল ট্রানজিট ট্রান্সপোর্ট প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতায় কলকাতা সমুদ্রবন্দর থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সিত্তে বন্দরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। সিত্তে থেকে কালাদান নদীপথে মিয়ানমারের পালেতওয়া এবং সেখান থেকে সড়কপথে মিজোরামের জোরিনপুই পর্যন্ত যোগাযোগ স্থাপন করা হয়েছে। নতুন শিলং-শিলচর মহাসড়ক এই যোগাযোগ ব্যবস্থাকে সম্প্রসারিত করবে এবং জোরিনপুই থেকে লংলাই হয়ে আইজল পর্যন্ত সংযুক্ত হবে।

এনএইচআইডিসিএলের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে বলেন, এই প্রকল্প শুধু উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রথম উচ্চগতির করিডর নয়, এটি পাহাড়ি অঞ্চলেও প্রথম বড় আকারের এমন অবকাঠামো উদ্যোগ। শিলচরকে মিজোরাম, ত্রিপুরা, মণিপুর এবং আসামের বরাক উপত্যকার প্রবেশদ্বার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ফলে এই সড়ক প্রকল্প উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ হয়ে উঠবে এবং ভারতের ‘অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি’-র জন্যও এক বড় মাইলফলক হবে।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, কালাদান প্রকল্পের মাধ্যমে এখন ওডিশার বিশাখাপত্তনম ও পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে পণ্যসামগ্রী সরাসরি উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পৌঁছানো সম্ভব হবে, বাংলাদেশকে বাইপাস করে। এরপর মহাসড়কটির মাধ্যমে দ্রুত ও নিরবচ্ছিন্ন সড়কপথে সেগুলোর পরিবহন নিশ্চিত করা যাবে, যা এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতি আনবে।

বর্তমানে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর একমাত্র স্থল সংযোগ শিলিগুড়ি করিডর, যা ‘চিকেনস নেক’ নামে পরিচিত। এছাড়া বাংলাদেশ ও মিয়ানমার হয়ে বিকল্প পথ রয়েছে, তবে বাংলাদেশ সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরপথে প্রবেশাধিকার সীমিত করেছে এবং আঞ্চলিক জলপথে তাদের প্রভাব বজায় রেখেছে। ফলে বিকল্প হিসেবে ভারত ও মিয়ানমার যৌথভাবে কালাদান প্রকল্প গ্রহণ করে। আশা করা হচ্ছে, শিলং-শিলচর সড়ক চালু হওয়ার আগেই পুরো যোগাযোগব্যবস্থাটি কার্যকর হবে।

এই প্রকল্পে সড়ক নির্মাণে ব্যবহার করা হবে আধুনিক প্রযুক্তি। জটিল পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য স্লোপ স্ট্যাবিলাইজেশন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হবে। ভূমির গঠন বিশ্লেষণে সহায়তা করতে রক অ্যাংকর, হাই-স্ট্রেন্থ ওয়্যার মেশ প্যানেল এবং রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। টপোগ্রাফি জরিপের জন্য লিডার স্ক্যানিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়া নজরদারির জন্য থাকবে পাইজোমিটার, রেইন গেজ, সেটলমেন্ট গেজ, ইনক্লাইনোমিটার ও জিওফোনের মতো আধুনিক যন্ত্রপাতি।

নির্মাণকাজ বাস্তবায়িত হবে হাইব্রিড অ্যানুইটি মোডে (এইচএএম), যা পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) একটি ধরন। প্রকল্পে থাকছে ১৯টি বড় সেতু, ১৫৩টি ছোট সেতু, ৩২৬টি কালভার্ট, ২২টি আন্ডারপাস, ২৬টি ওভারপাস, আটটি সীমিত উচ্চতার সাবওয়ে এবং ৩৪টি ভায়াডাক্ট।

গত ৩০ এপ্রিল ভারতের কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা প্রায় ২২,৮৬৪ কোটি রুপি ব্যয়ে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়। ১৪৪.৮ কিলোমিটার পড়েছে মেঘালয়ে এবং ২২ কিলোমিটার পড়েছে আসামে। প্রকল্পটি চালু হলে শিলং থেকে শিলচরের যাত্রাপথ সাড়ে আট ঘণ্টা থেকে কমে পাঁচ ঘণ্টায় নেমে আসবে।

উল্লেখযোগ্য যে, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তার প্রশ্নে ভারতের অর্থায়নে পরিচালিত রেল সংযোগ প্রকল্পগুলোর নির্মাণ ও জরিপকাজ স্থগিত রয়েছে। এতে অন্তত তিনটি চলমান প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে এবং আরও পাঁচটির জরিপ কার্যক্রম থেমে গেছে। এসব প্রকল্পের আর্থিক পরিমাণ প্রায় পাঁচ হাজার কোটি রুপি বলে জানিয়েছে দ্য হিন্দু।

সংবাদমাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত তাদের কৌশল পুনর্বিবেচনা করছে এবং উত্তর ভারতে রেল অবকাঠামো জোরদার করার পাশাপাশি ভুটান ও নেপালের মাধ্যমে বিকল্প সংযোগ স্থাপনের সম্ভাবনা বিবেচনা করছে। এসব নতুন সংযোগ পরিকল্পনার সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার কোটি রুপি।

ভারতের একজন কর্মকর্তার বরাতে দ্য হিন্দু জানিয়েছে, বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা না ফিরলে এই দেশটির মাধ্যমে সংযোগ প্রকল্পে নতুন অর্থায়ন বা নির্মাণ সামগ্রী পাঠানো হবে না। তবে ভারতের অংশে কাজ চলবে পরিকল্পনা অনুযায়ী।

২০২৪ সালে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১২.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram