ঢাকা
১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ২:১১
logo
প্রকাশিত : জুন ১৬, ২০২৫

নিম্নমানের বই ছেপে শতকোটি টাকা লুট

অনিয়মের পাশাপাশি নিম্নমানের কাগজে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই ছেপে শতকোটি টাকা অতিরিক্ত লোপাট করেছে প্রেস মালিকদের অসাধু চক্র। তাদের অপকর্মে পাঁচ মাস পেরোনোর আগেই কিছু অঞ্চলে শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য বাকি মাসগুলোয় এসব বই পড়া কষ্টকর হয়ে পড়ছে। এ অবস্থায় ২০২৬ শিক্ষাবর্ষেও মানহীন বই ছাপার প্রস্তুতি নিয়েছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবি।

এ জন্য দরপত্র প্রকাশের পর তাতে সংশোধনী আনা হয়েছে। এবার এই বই ছাপায় বাজেট রয়েছে এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি প্রাক-প্রাথমিক বইয়ের জন্য দরপত্র প্রকাশ করে এনসিটিবি। তাতে ৪৫ কোটি টাকার কাজে ২২.৭৫ ও ৩৩.৫ ইঞ্চি ওয়েব মেশিন থাকার শর্ত দেওয়া হয়।

কিছুদিন পর তাতে সংশোধনী এনে মেশিনের আকার যথাক্রমে ২২ ও ৩২ ইঞ্চি থাকার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়। সংশ্লিষ্ট অভিজ্ঞরা বলছেন, এই আকারের মেশিনে সঠিক মাপের বই করা সম্ভব নয়। ছাপাও সঠিক হবে না। তাতে আবারও মানহীন বই পাবে শিক্ষার্থীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রেস মালিকদের অসাধু চক্র কাজ পেতে কয়েক কোটি টাকার তহবিল তৈরি করে। পরে চক্রটি এনসিটিবিকে মেশিনের আকারে সংশোধনী আনার চাপ দেয়। এই বই যেহেতু প্রাথমিকের, তাই এনসিটিবি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। অন্যদিকে প্রেস মালিকদের ওই চক্র বড় অঙ্কের অর্থ দিয়ে অধিদপ্তরকে সন্তুষ্ট করে। এতে অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সংশোধনী আনার পক্ষে মত দেন।

এনসিটিবির উৎপাদন নিয়ন্ত্রক আবু নাসের টুকু বলেন, ‘আমরা সঠিক মানের বই পাওয়ার জন্য উপযোগী মেশিনের মাপ দিয়েই দরপত্র আহবান করেছিলাম। তিনটি কম্পানি প্রতিযোগিতার সুযোগ পায়। এখন আরো বেশি কম্পানিকে সুযোগ দিতে মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকেই মেশিনের মাপে পরিবর্তন আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ফলে আমরা দরপত্রে সংশোধনী আনি।’ জানা গেছে, আনন্দ প্রিন্টার্সের মালিক রব্বানি জব্বার পতিত সরকারের দুই দফার এক পূর্ণ মন্ত্রীর ছোট ভাই। এমনকি রব্বানি জব্বারও নেত্রকোনার এক উপজেলায় চেয়ারম্যান ছিলেন। পতিত সরকারের আমলে তিনি একচেটিয়া বইয়ের কাজ করেছেন। এখনো তিনি তাঁর কর্তৃত্ব ধরে রেখেছেন। তাঁকে ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে সক্ষমতার বেশি কাজ দেওয়া হয়। মানহীন বই ছাপার অভিযোগে তাঁর প্রেসের ২০ হাজার বই কেটে দেয় এনসিটিবি। এবারও তিনি কাজ পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে। গত ৫ আগস্টের পরও তিনি বাংলাদেশ মুদ্রণ সমিতির সভাপতির পদ ছাড়েননি। সমিতির আরো কয়েকজন ঊর্ধ্বতন নেতা তাঁকে সমর্থন দিচ্ছেন। কথা বলার জন্য রব্বানি জব্বারকে ফোন দিলে এমনকি এসএমএস পাঠালেও তিনি তাতে সাড়া দেননি।

সম্প্রতি এনসিটিবি ৩২টি টিম ৬৪ জেলায় পাঠায়। টিমগুলো দৈবচয়ন পদ্ধতিতে বই সংগ্রহ করে দেখতে পায় ৩৩ শতাংশ বই নিম্নমানের। ৪০ কোটির মধ্যে ১৩ কোটি বইয়ের মানই খারাপ। এসব বইয়ে জিএসএম, ঔজ্জ্বল্য, বাঁধাই—কিছুই ঠিক নেই। নিম্নমানের এসব বই দিয়ে শতকোটি টাকা অতিরিক্ত লোপাট করেছে ওই অসাধু চক্র।

বই ছাপার পর মান যাচাইয়ের জন্য হাই-টেক সার্ভে অ্যান্ড ইন্সপেকশন সার্ভিসকে নিয়োগ দেয় এনসিটিবি। প্রতিষ্ঠানটিও মাঠ পর্যায়ে নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পরীক্ষা করে। তাদের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, লেটার এন কালার লি. সবচেয়ে বেশি নিম্নমানের বই দিয়েছে। তারা ৮০ জিএসএমের পরিবর্তে অতি নিম্নমানের ৬৯ ও ৭০ জিএসএমের কাগজ ব্যবহার করেছে। অনুপম প্রিন্টার্স ৭০ জিএসএমের পরিবর্তে ৬১ জিএসএম, অক্সফোর্ড প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন ৮০ জিএসএমের পরিবর্তে ৭৩ জিএসএম, দ্য গুডলাক ৮০ জিএসএমের পরিবর্তে ৭১ জিএসএম কাগজ ব্যবহার করেছে।

লেটার এন কালার লিমিটেডের স্বত্বাধিকারী শেখ সিরাজউদ্দিন বলেন, ‘আমরা ৭০ ও ৮০ উভয় জিএসএমের কাজই করেছি। এ ক্ষেত্রে কোনো বইয়ের ক্ষেত্রে ওলট-পালট বা ভুল হতে পারে। এনসিটিবি আমাদের চিঠি দিয়েছে। আমরা বইগুলো রিপ্লেস করে দিচ্ছি।’

হাই-টেকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৭০ জিএসএমের পরিবর্তে শাফিন প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন ৫৯ জিএসএম, সুবর্ণা প্রিন্টার্স ৫৫ জিএসএম, অ্যারিস্টোক্র্যাটস সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং ৫৬ জিএসএম, বর্ণমালা প্রেস ৫৮ জিএসএম, ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস ৬৩ জিএসএম, বর্ণমালা ৬০ জিএসএম, দোয়েল প্রিন্টার্স সাড়ে ৬৫ জিএসএম, রেদওয়ানিয়া প্রেস অ্যান্ড পাবলিকেশন ৬৫ জিএসএম কাগজ ব্যবহার করেছে।

এনসিটিবির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্ব) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী বলেন, ‘এরই মধ্যে ১৬টি প্রতিষ্ঠানকে তাদের দেওয়া নিম্নমানের বই রিপ্লেস করে দিতে চিঠি দিয়েছি। যদি তারা তা না নেয়, তাহলে তাদের জমা রাখা ২০ শতাংশ অর্থ কেটে নেওয়া হবে। এ ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা চলমান রয়েছে। ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের প্রাক-প্রাথমিকের দরপত্রে সংশোধনীর ব্যাপারে চেয়ারম্যান বলেন, ‘মেশিনের প্রকৃত মাপ দিয়েই আমরা দরপত্র আহবান করেছিলাম। কিন্তু ১১৬টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান সংশোধনীর জন্য চিঠি দেয়। অধিকসংখ্যক প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর এ ব্যাপারে সায় দেয়। তবে তাদের আমরা স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী বই দিতে বলেছি। তারা বলেছে পারবে। তাই সংশোধনী আনা হয়েছে।’

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram