ঢাকা
২২শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ২:৫৪
logo
প্রকাশিত : জুন ২২, ২০২৫

অচলপ্রায় কুয়েটে হয়নি বেতন-বোনাস, দুশ্চিন্তায় শিক্ষার্থীরাও

ছাত্ররাজনীতি ঘিরে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষের পর থেকে অচল হয়ে পড়েছে খুলনা প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। প্রায় চার মাস ধরে ক্যাম্পাস বন্ধ। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করেন ভিসি মাসুদুর রহমান। এরপর নতুন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীকে নিয়োগ দেওয়ার পর নানান জটিলতার মুখে তিনিও পদত্যাগ করেন। বর্তমানে নানান জটিলতায় কুয়েট স্থবির। এবার ঈদুল আজহায় শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয়নি।

আন্দোলন শেষে শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ হলেও শিক্ষকদের দাবি পূরণ হয়নি। তবে ২৬ জুনের পর খুব শিগগিরই ভিসি নিয়োগ হতে পারে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের।

জানা যায়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় ২৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে চলছে অচলাবস্থা। শিক্ষার্থীদের এক দফা আন্দোলন ও আমরণ অনশনের প্রেক্ষিতে গত ২৫ এপ্রিল উপাচার্যকে অপসারণ করে সরকার। গত ১ মে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য হিসেবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হযরত আলীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ মে থেকে ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও একাডেমিক কার্যক্রমে ফেরেননি শিক্ষকরা। ছাত্রদের হাতে শিক্ষক লাঞ্ছিতের বিচার না হওয়া পর্যন্ত ক্লাসে ফিরবেন না বলে জানায় কুয়েট শিক্ষক সমিতি। এরপর গত ২১ মে ড. মো. হযরত আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে অচল অবস্থায় রয়েছে কুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়। একদিকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা বন্ধ। অন্যদিকে প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির রয়েছে।

আরও জানা যায়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা চলছে টানা চার মাস ধরে। একাডেমিক কার্যক্রম এবং আর্থিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল আর্থিক বিষয়ের অনুমোদন দেন। কিন্তু উপাচার্য না থাকায় প্রায় ১১০০ শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারী মে মাসের বেতনসহ পবিত্র ঈদুল আজহার উৎসব ভাতা পাননি। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬০০ কোটি টাকার চলমান উন্নয়ন কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের বিলও রয়েছে বন্ধ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা বলেন, ক্লাসে শিক্ষকরাও ফিরতে চান। আমরাও চাই প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু হোক। কিন্তু যেখানে সন্তানদের বয়সী শিক্ষার্থীদের কাছে শিক্ষকরা লাঞ্ছনার শিকার হন সেখানে কিছুই বলার থাকে না। সেখানে কঠোর অবস্থানে রয়েছেন শিক্ষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য একটি মহল শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করেছে। বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে শিক্ষকদের সঙ্গে বেয়াদবি করানো উচিত হয়নি। কুয়েটে একটি ভীতিকর অবস্থা তৈরি করা হয়েছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরাও আতঙ্কে থাকেন। কোন সূত্র ধরে আবার কোন ফ্যাসাদে ফাঁসাবে এমন আতঙ্কে সবাই।

১৯ ব্যাচের তানিম হাসান বলেন, চার মাস ধরে আমাদের পরীক্ষা আটকে আছে। তিন বছর আট মাসে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার স্বপ্ন ছিল। এখন সেটাই বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ধনী-গরিব সবাই পড়ে, কিন্তু সবার পারিবারিক সামর্থ্য এক নয়। অনেকেই চাকরি বা উচ্চ শিক্ষার সুযোগ হারাচ্ছে শুধু একটি পরীক্ষার অপেক্ষায়। আমরা শিক্ষকদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানাই, দয়া করে দ্রুত ক্যাম্পাস খুলে পরীক্ষা নিন। আমাদের ভবিষ্যৎ থমকে আছে।

কুয়েটের ট্রিপল ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ওবায়দুল্লাহ কুয়েট প্রশাসনের উদ্দেশে বলেন, টানা চার মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এসময় ৫ হাজাররেও বেশি শিক্ষার্থী মানসিক অস্থিরতা, হতাশা এবং ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও বিচারের দাবি আমরা সবসময়ই জানিয়েছি। আমরা বিচার চাই, কিন্তু বিচার বিলম্বিত করে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখা কোনো সমাধান নয়। অনুরোধ করছি, একাডেমিক কার্যক্রম অবিলম্বে শুরু করুন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত ও যথাযথ আইনগত প্রক্রিয়া চলুক। কিন্তু হাজারো নিরপরাধ শিক্ষার্থীর স্বপ্ন ও ক্যারিয়ারকে জিম্মি করে নয়। আমরা পড়তে চাই, পরীক্ষা দিতে চাই, ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে চাই। শিক্ষার্থীদের কথা ভাবুন।

কুয়েট শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. মো. ফারুক হোসেন বলেন, দীর্ঘদিনের জটিলতা কাটিয়ে আমরাও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে চাচ্ছি। ভাইস চ্যান্সেলর না থাকায় কুয়েটের স্বাভাবিক কার্যক্রম অচল অবস্থায় রয়েছে। তবে ২৬ জুনের মধ্যে ভিসি নিয়োগের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। খুব শিগগিরই নতুন ভিসি আসবেন। ২৩ জুন শিক্ষক সমিতির মিটিং আছে। আমরা সার্বিক বিষয়ে আলোচনা করব।

এ বিষয়ে কথা বলতে খুলনা প্রযুক্তি ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিসুর রহমান ভূইয়ার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram