

বাবুগঞ্জ (বরিশাল) প্রতিনিধি: ধর্ষণের বেদনাবিধুর অতীত ও দীর্ঘ দুই যুগের সংগ্রাম পেছনে ফেলে নতুন জীবনের পথে হাঁটছেন বরিশালের বাবুগঞ্জের সালমা বেগম। জীবনের নির্মম বাস্তবতায় পরিবার ও সমাজচ্যুত এই নারীকে একটি আধাপাকা ঘর নির্মাণ করে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে বরিশাল জেলা প্রশাসন।
২০০৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে চাচাতো ভাইয়ের বর্বরতার শিকার হন সালমা। পরের বছর ৯ জুন জন্ম দেন এক পুত্র সন্তানের। দরিদ্র পরিবারের ট্রলি চালক বাবা অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করলেও সামাজিক প্রভাবশালী মহলের চাপ ও প্রতিকূলতার কারণে পরিবারকে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হতে হয়।
২০০৬ সালে মামলাটি চলাকালে সালমার বাবা স্ট্রোক করে শয্যাশায়ী হন। সংসার চালাতে তিন বছরের শিশুকে মায়ের কাছে রেখে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ নেন সালমা। নিজের জীবনের সংগ্রাম উপেক্ষা করে উপার্জনের অধিকাংশ অর্থ পাঠিয়েছেন সন্তানের ভবিষ্যৎ ও পরিবারের প্রয়োজন মেটাতে।
দীর্ঘ ৮ বছর লড়াই শেষে ২০১১ সালে আদালত রায় দেন—আসামি গিয়াস উদ্দিনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি শিশুর ২১ বছর বয়স পর্যন্ত ভরণপোষণের ব্যয় রাষ্ট্র বহন করবে। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পর ভাইয়ের আশ্রয়ে থেকে সরকারী ভরণপোষণের অর্থের প্রায় পুরোটাই আত্মসাৎ করা হয় সালমার অজান্তে।
শেষ কিস্তির টাকা গ্রহণের সময় বিষয়টি জেলা প্রশাসক বরিশাল মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের নজরে আসে। পরিস্থিতি অনুধাবন করে তিনি সালমার ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তার সার্বিক তত্ত্বাবধানে বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, সমাজসেবা অধিদপ্তর ও নানা এনজিওর সহযোগিতায় বাবুগঞ্জের রহমতপুরে মহাসড়ক সংলগ্ন জমি ক্রয় করে সালমার জন্য নির্মাণ করা হয় একটি আধাপাকা ঘর।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেলে জেলা প্রশাসক সালমার হাতে নতুন ঘরের চাবি তুলে দেন ও ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন। একই সঙ্গে তার ছেলের ভরণপোষণের শেষ কিস্তির ১,৮২,২৮১ টাকার চেকও প্রদান করা হয়।
এসময় উপস্থিত ছিলেন বাবুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারুক আহমেদ, জেলা সমাজসেবা কার্যালয় বরিশালের উপপরিচালক এ কে এম আক্তারুজ্জামান তালুকদার, সহকারী পরিচালক সাজ্জাদ পারভেজ, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের কর্মকর্তাসহ এনজিও প্রতিনিধি, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ।
নিজের মাথা গোঁজার ঠাঁই দেখে আবেগাপ্লুত হয়ে সালমা বলেন, “এতদিন পর বুঝলাম, রাষ্ট্র আমাকে ভুলে যায়নি। আমার সন্তানকে মানুষ করে আত্মনির্ভরশীল করতে চাই।” বর্তমানে তার ছেলে স্থানীয় একটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে পড়াশোনা করছে।
সালমা জেলা প্রশাসক ও সরকারের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখছেন—সম্মান, নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে সমাজে মাথা তুলে দাঁড়ানোর।

