ঢাকা
১৪ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ৬:১২
logo
প্রকাশিত : সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৫

মামলাবাজ আতঙ্ক শ্রীপুরে

৫ই আগস্ট ’২৪-এর পট পরিবর্তনের পর থেকে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় সাধারণের মাঝে বিরাজ করছে মামলা আতঙ্ক। বিদায়ী আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক, নেতাকর্মী তো বটেই, মামলা হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও! মামলাবাজরা এতটাই বেপরোয়া যে, গাড়ি পার্কিংয়ের মতো সামান্য বিষয়কে টেনে নিয়েছে আদালত পর্যন্ত। রাজনীতির সঙ্গে ন্যূনতম সম্পৃক্ততা নেই এমন ব্যক্তিদের নাম যুক্ত করা হয়েছে বিভিন্ন এজাহারে। যার ফলশ্রুতিতে কারাভোগ করছেন একান্ত নিরীহ লোকজন। মামলাবাজরা কৌশলী। তারা বরাবরই থাকছেন পর্দার অন্তরালে। তাদের অর্থকড়ি, প্রভাব বলয়ের কাছে অসহায় সাধারণ। কে কোন মামলার কতো নম্বর আসামি কে হবে, আর কারা হবেন বাদী এবং সাক্ষী- সবই ঠিক করে মামলাবাজ চক্র।

ওই চক্রের সদস্যদের রাজনৈতিক পরিচয়ে ভিন্নতা রয়েছে। তবে স্বার্থের প্রশ্নে তাদের অবস্থান অভিন্ন। তাদের কাছে মামলা মানেই টাকা। মামলা-মামলা খেলা করেন তারা। এটা তাদের নেশা। যদিও এটি শ্রীপুরের ভুক্তভোগী নিরীহ মানুষদের জীবন-মরণ সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে আজ। সরজমিন শ্রীপুর উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলো ঘুরে ভয়ঙ্কর মামলাবাজ চক্রের সন্ধান পেয়েছে । নথিপত্র পর্যালোচনা আর ভিকটিমের বয়ানে উঠে এসেছে লোমহর্ষক সব কাহিনী। যার কিয়দাংশ স্থান পেয়েছে এখানে। আমাদের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। স্মরণ করা যায়, মামলাবাজদের বিরুদ্ধে খোলাখুলিভাবে এখনো অনেকে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। যারা মামলাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তাদের কেউ কেউ জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। অ্যাক্টিভওয়্যার

বিএনপি নেতাদের মামলা দিয়ে হয়রানি
শ্রীপুর উপজেলা বিএনপি’র সদস্য আনোয়ার হোসেন। স্থানীয় একটি হাইস্কুলে শিক্ষকতা করেন। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় শিক্ষক সমিতির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তিনি। তার বাসার পেছনে জায়গা ক্রয় করে নেন শ্রীপুর পৌর বিএনপি’র সদস্য সচিব বিল্লাল হোসেন ব্যাপারি। এরপর তিনি আনোয়ার হোসেনকে রাস্তার জন্য জায়গা ছাড়তে বলেন। তার কথামতো জায়গা না ছাড়ায় তিনি আমাকে হুমকি দেন। এই ঘটনার পর জানুয়ারিতে তাকে আসামি করে একটি বিস্ফোরক মামলা দায়ের করা হয়। ওই মামলার বাদী মেঘনা নামে এক ব্যক্তিকে দেখালে নেপথ্যে ছিলেন বিল্লাল ব্যাপারি।

এ ঘটনার পর গাজীপুর মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মঞ্জুরুল করিম রনির সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানান আনোয়ার হোসেন। তখন সঙ্গে সঙ্গে বিল্লাল ব্যাপারিকে ফোন করেন রনি। কোনো কারণ ছাড়াই কেন আনোয়ার হোসেনকে আসামি করা হয়েছে সেটা জানতে চান। তখন বিল্লাল ব্যাপারি জবাব দেন, তিনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচন করেছিলেন সেজন্য তাকে আসামি করা হয়েছে। আনোয়ার হোসেন আরও বলেন, আমার কারও সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই। শুধু রাস্তার জায়গা না দেয়ায় মামলার আসামির তালিকায় আমার নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। আমি এখন বিল্লাল ব্যাপারির আতঙ্কে আছি। যেকোনো সময় আমাকে মেরে ফেলতে পারে এমন ভয় মনের মধ্যে কাজ করছে।

জোরপূর্বক বানানো হচ্ছে বাদী
মাস দুয়েক আগে উপজেলার বরমী এলাকার শরীফুল ইসলামের সঙ্গে গাড়ি পার্কিং নিয়ে তর্কাতর্কি হয় একই এলাকার প্রবাসফেরত এনামুল হক মোল্লার সঙ্গে। এর জের ধরে শরীফুলকে এলাকার অন্য একটি মারামারির মামলায় আসামির তালিকায় নাম ঢুকিয়ে দেন। ওদিকে তাবলীগ জামাত থেকে ফিরে রাতে বাসায় ঘুমাচ্ছিলেন শরীফুল। ওইদিন রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়। এখনো তিনি কারাভোগ করেছেন। শরীফুলের স্বজনরা জানান, এনামুল সন্ত্রাসী প্রকৃতির লোক। বিএনপি সরকারের সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় সৌদি আরব চলে যান। ৫ই আগস্টের পর দেশে এসে সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছেন।

এদিকে গত ১৫ দিন আগে ৩৮ জনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করা হয় শ্রীপুর থানায়। এই মামলায় বাদী করা হয়েছে সুরোজ মিয়া নামে এক ব্যক্তিকে। মামলার আসামিরা বাদী সুরোজ মিয়ার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এনামুল হক মোল্লা জোর করে তাকে বাদী বানিয়েছেন। তিনি মামলা সম্পর্কে কিছু জানেন না।

ওদিকে শিল্পকারখানার ঝুট ব্যবসা না দেয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ী ইব্রাহিমকে দুই মামলায় আসামি করা হয়েছে। ভুক্তভোগী ইব্রাহিম নোমান গ্রুপের সঙ্গে ব্যবসা করেন। ইব্রাহিম বলেন, নোমান গ্রুপের ঝুট ব্যবসা না দেয়ায় স্থানীয় বিএনপি নেতা রাজীবুল, আবুল, সালাম আমার বিরুদ্ধে দুটি মামলা দিয়েছে। একটি মামলার বাদী করেছে কুলসুম নামে এক নারীকে আরেকটি মামলার বাদী করেছে খায়ের নামে আরেকজনকে। অথচ বাদী দু’জনেই জানেন না তাদেরকে যে মামলার বাদী করা হয়েছে। পরে তারা আদালতে গিয়ে আবেদন করেছেন, তারা এই মামলার সঙ্গে জড়িত নন। তাদের নাম প্রত্যাহার করার জন্য।

ঝুট নিয়ন্ত্রণে বিল্লাল
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে হওয়ায় শ্রীপুর পুরো এলাকায় শিল্প কলকারখানায় ভরপুর। উপজেলাটিতে অন্তত দুই শতাধিক কলকারখানা রয়েছে। ৫ই আগস্টের পট পরিবর্তনের পর বেশির ভাগ কলকারখানার ঝুট ব্যবসার একক নিয়ন্ত্রণ করেন বিএনপি নেতা বিল্লাল ব্যাপারি। তার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বিশাল বাহিনী। এমন কি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তার সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। স্থানীয় বিএনপি’র কর্মীরা ঝুট ব্যবসার জন্য তার কাছে গেলে উল্টো তিনি শাসান। এমন একটি অডিও হাতে এসেছে। অডিওতে শোনা যাচ্ছে, বিএনপি’র এক কর্মী বিল্লাল ব্যাপারির কাছে ঝুট ব্যবসা দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। তখন বিল্লাল ব্যাপারি বলেন, তুমি এতদিন কোথায় ছিলা। তোমাকে তো মিছিল মিটিংয়ে দেখি নাই।

আমি টাকা নিয়ে ব্যবসা করি। এই ব্যবসা করতে টাকা লাগে। এদিকে নোমান গ্রুপের দুটি কারখানায় ঝুট বিল্লাল ব্যাপারি নিয়ন্ত্রণ করেন বলেন ওই প্রতিষ্ঠানের ল্যান্ড তদারককারী ইব্রাহিম। শুধু নোমান গ্রুপ নয় শ্রীপুরের বেশির ভাগ কলকারখানার ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করেন বিল্লাল ব্যাপারি। ৫ই আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলাকারী আওয়ামী লীগ নেতারা বিল্লাল ব্যাপারির সঙ্গে ঝুট ব্যবসা করছেন। এই ব্যবসা করেই তিনি অন্তত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে বিএনপি নেতা বিল্লাল ব্যাপারিকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি তার ওয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ক্ষুদেবার্তা পাঠালেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram