ঢাকা
৩০শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৩:৩৫
logo
প্রকাশিত : এপ্রিল ২৭, ২০২৫

বদলগাছীতে বিলুপ্তির পথে পুখুরিয়া জমিদার বাড়ির গোপাল মন্দির

খালিদ হোসেন মিলু, বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার কোলা ইউনিয়নের পুখুরিয়া গ্রামের হিন্দুপাড়ায় অবস্থিত বহু পুরোনো ঐতিহ্যবাহী জমিদার বাড়ির গোপাল মন্দির। এক সময় কালের সাক্ষী হয়ে ঐতিহ্য ও স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা শতাধিক বছরের পুরোনো মন্দিরটি আজ বিলুপ্তির পথে। এমন অবস্থায় এই বহু বছরের মন্দিরটি দ্রুত সংস্কার ও স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের দাবি স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের।

সনাতন ধর্মের স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, ১০০ বছরে আগে তৎকালীন জমিদার যতীন মজুমদার তার বাড়ির সন্নিকটে ইট ও সুরকি দ্বারা পারিবারিক পূজা অর্চনার জন্য এই মন্দির নির্মাণ করেন। জমিদার বাড়ির বিগ্রহ মন্দিরটির গোপাল মন্দির নামে পরিচিত। এক সময় জমিদার যতীন মজুমদারের পারিবারিক এই বিগ্রহ মন্দিরে প্রতিদিন পূজা অর্চনা হতো। এক সময় বছর জুড়ে দুর্গোৎসবসহ ছোট বড়, নানা ধরনের পূজা-অর্চনা এবং ধর্মীয় উৎসবে মুখরিত থাকত মন্দিরটি। সকাল-সন্ধ্যা বাজত শঙ্খধ্বনি। মন্দিরে জমিদার বাড়ির নারীরা দলবেঁধে পূজা করত। দূর-দূরান্তের পূজারিরাও আসতেন মাঝে মধ্যে এখানে। জমিদার প্রথা বিলুপ্তির পরও অনেক দিন চলছিল স্থানীয় হিন্দুদের ধর্মীয় পূজা-অর্চনা।

কিন্তু স্বাধীনতার বহু বছর আগে জমিদার যতীন মজুমদারসহ তার উত্তরসূরিরা সপরিবারে ভারতে পাড়ি জমান। এতে করে বন্ধ হয়ে যায় মন্দিরের সব ধর্মীয় কর্মযজ্ঞ। জমিদার যতীন মজুমদার পরিবারসহ ভারতে চলে যাওয়ার পর সেখানকার হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মন্দিরটিতে ধর্মীয় পূজা অর্চনা শুরু করেন। বেশ কয়েক বছর পূজা করার পরে মন্দিরের ছাদে ফাটল ধরে। এ সময় মন্দিরটি পরিত্যক্ত হয়। প্রায় ২৫ বছর ধরে এই মন্দিরটি সংস্কারের অভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় পূজা বন্ধ হয়েছিল। এসময় মন্দিরে জ্বলেনি প্রদীপের আলো, সকাল-সন্ধ্যা শোনা যায়নি ঢাকের শব্দ আর শঙ্খধ্বনি। জরাজীর্ণ এই মন্দিরের দেওয়ালও ছাদের প্লাস্টার খসে পড়ে যাওয়ায় জমিদার বাড়ির মন্দিরটি আজ কালের বিবর্তমানে বিলীন হতে চলেছে। ফলে মন্দিরের সেই সোনালি দিনগুলো এখন শুধুই অতীত।

বেশ কিছু জায়গায় জুড়ে উঁচু ও নিখুঁত গাঁথুনি দ্বারা তৈরি মন্দিরটির নির্মাণ শৈলীতে রয়েছে জমিদার ঐতিহ্যের স্মৃতিচিহ্ন, যা দর্শনার্থীদের ব্যাপক মন কাড়ে। দৃষ্টিনন্দন এই মন্দিরটিতে পনেরো দরজা বিশিষ্ট মন্দিরের ভেতর ও বাইরে অপরূপ কারুকার্যে গড়া পুরো অবকাঠামোটিই এখন প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এমন অবস্থায় মন্দিরটি দ্রুত সংস্কার ও স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষণের দাবি সনাতন ধর্মাবলম্বী ও স্থানীয়দের।

স্থানীয় বাসিন্দা বিভাস চন্দ্র (৫৫) জানান, বহুদিন থেকে এ মন্দিরটি দেখে আসছি। সময় আর প্রকৃতির দৈন্যতায় জমিদার বাড়ির মন্দিরটির আজ বেহাল দশা। সরকার যদি মন্দিরটি সংস্কার করত তাহলে, এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যারা আছি সবাই দুর্গোৎসব সহ ছোট-বড় নানা রকমের পূজা-অর্চনা করতে পারতাম।

স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জু বলেন, ১০০ বছরের অধিক আগে নির্মিত এই মন্দির। এক সময় হিন্দুধর্মাবলম্বীরা এখানে পূজা করত। মন্দিরটি নানা সমস্যার কারণে দীর্ণ দিন পরিত্যক্ত ছিল।
বছর দুয়েক আগে ইউনিয়ন পরিষদের সহযোগিতায় মন্দিরের পুরোনো জরাজীর্ণ ছাদ ভেঙে নতুন করে ছাদ নির্মাণ করেছে।

মন্দিরের সভাপতি জগদীশ চন্দ্র বলেন, পুরোনো এই গোপাল মন্দিরটি ২৫ বছর ধরে পরিত্যক্ত হয়ে এখানে পূজা বন্ধ হয়ে পড়েছিল। অন্য জায়গায় ডেকোরেটর কাপড় দিয়ে মন্দির বানিয়ে সেখানে পূজা করা হয়। তবে পুরোনো এই ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটির নতুন ছাদ নির্মাণের মধ্য দিয়ে সামান্য সংস্কার করা হয়েছে। স্থানীয়দের সহায়তায় মন্দিরের দরজা ও জানালা লাগানো হয়েছে। এখন মন্দিরের দেওয়াল পুরোপুরিভাবে সংস্কার করতে হবে। বছর খানেক ধরে এখানে আবারও ছোট পূজা অর্চনা শুরু হয়েছে। মন্দিরটি পুরোটা সংস্কার করা হলে হয়তো আবারও সেই আগের মত বড় পূজা গুলো এখানে হবে।

কোলা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নুর ইসলাম মাষ্টার জানান, শতাধিক বছর আগে নির্মিত ঐতিহ্যবাহী গোপাল মন্দির। অযত্ন আর অবহেলায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পুখুরিয়া জমিদার বাড়ির গোপাল মন্দির। জমিদারি আমলের দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপত্য, ঐতিহ্যের নিদর্শন এই মন্দিরটির সংরক্ষণ এবং দ্রুত সংস্কারের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে জানানো হবে।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram