ঢাকা
৩রা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
ভোর ৫:০৭
logo
প্রকাশিত : এপ্রিল ২০, ২০২৫

রাজবাড়ীতে জনপ্রিয় হচ্ছে পেঁয়াজ সংরক্ষণের এয়ার ফ্লো মেশিন

এম মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী প্রতিনিধি: রাজবাড়ীতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য জনপ্রিয় হচ্ছে এয়ার ফ্লো মেশিন। দাম কম, পেঁয়াজ সংরক্ষণের সুবিধা, আট থেকে নয় মাস সংরক্ষণ করা যায়, ঘাটতি হয় না এবং অল্প জায়গায় রাখার কারণে জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই কৃষি যন্ত্র। কৃষি বিভাগ বলছে, চাষিরা এয়ার ফ্লো মেশিনের সাহায্যে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করলে দীর্ঘ সময় পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় এবং ঘাটতি কম হয়। এজন্য পেঁয়াজের আমদানি নির্ভরতাও কমবে।

সাধারণত চাষিরা মাচা পদ্ধদিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে থাকে। টিনের ঘরে এক থেকে দুই স্তরে বাঁশ দিয়ে মাচা বানিয়ে তার উপর পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে। তবে এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করলে এক থেকে দুই মাস পরে গিয়ে পেঁয়াজে পচন শুরু হয়। কারণ মাচায় বাতাশ প্রবেশ করতে পারে না এবং টিনের গরমে পেঁয়াজ শুকিয়ে যায় এবং পচন দেখা যায়। মাচা পদ্ধতিতে পেঁয়াজ ছয়মাস রাখলে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ পেঁয়াজ নষ্ট হয়। এছাড়া পেঁয়াজের রং কালো হবার কারণে চাহিদাও কমে যায়। এজন্য চাষিরা দ্রুত কম দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করে দেয়। এর বিপরীতে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি, পাংশা ও কালুখালী উপজেলায় জনপ্রিয়তা পেয়েছে এয়ার ফ্লো মেশিন।

এয়ার ফ্লো মেশিন বসানোর জন্য পাকা ঘরে ১২ বর্গ ফুটের একটি হাউজ তৈরি করতে হয়। হাউজের ভেতর ১০ ইঞ্চি উচু করে বাঁশের মাচা তৈরি করে পাতা হয়। হাউজের মাঝখানে বসানো হয় এয়ার ফ্লো মেশিন। এরপর ১২ বর্গফুটের হাউজে রাখা হয় তিনশ মন পেঁয়াজ। পেয়াজের তাপমাত্রা ঠিক রাখার জন্য দেয়া হয় এয়ার ফ্লো মেশিনের সাহায্যে বাতাস।

বাতাশ মেশিনের সাহায্যে নিচে গিয়ে বাঁশের মাচার নিচে ছড়িয়ে পড়ে এবং আস্তে আস্তে উপরে ওঠে। ফলে পেঁয়াজের তাপমাত্র ঠিক থাকে। এ কারণে পেঁয়াজ শুকিয়ে যায় না এবং পচন ধরে না।

রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা শহরের অবস্থিত শাহীন মেশিনারীজ এই এয়ার ফ্লো মেশিন তৈরি করছে। যার দাম পড়ছে ১৬ হাজার টাকা। মেশিনটি মুলত ১৬ ইঞ্চি গোলাকার, ৭০ ইঞ্চি লম্বা পাইপের মধ্যে এক হরচের একটি ফ্যান বসানো থাকে। সেই ফ্যানের বাতাস নিচে গিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া একটি অটো সুইচ লাগানো থাকে। যার কারণে এই মোটর তিন ঘন্টা চলে আবার তিন ঘন্টা বন্ধ থাকে।

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি, পাংশা ও কালুখালী উপজেলার বিভিন্ন কৃষকের বাড়ী ঘুরে দেখা যায়, অনেকে শোবার ঘরের একটি রুমেই হাউজ বানিয়ে তার মধ্যে এয়ার ফ্লো মেশিন বসিয়ে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করেছে। অনেক কৃষক একাধিক মেশিনও বসিয়েছে।

কালুখালি উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের শ্যামসুন্দরপুর গ্রামের কৃষক মজনু বিশ্বাস বলেন, এবছর আমি সাড়ে পাঁচশ মন পেঁয়াজ পেয়েছি। এর মধ্যে আমি তিনশ মন পেঁয়াজ এয়ার ফ্লো মেশিনের সাহায্যে থাকার ঘরে রেখেছি। আর বাকি পেঁয়াজ মাচা করে রেখেছি।

এয়ার ফ্লো মেশিনের সুবিধা হল এই হাউজে একা একাই পেঁয়াজ রাখা যা,য় আবার বিক্রির জন্য একা একাই নামানো যায়। বাড়তি কোন লোকের প্রয়োজন হয় না। কিন্তু মাচাতে পেঁয়াজ উঠাতে গেলেও তিনজন লোকের প্রয়োজন আবার নামাতেও তিনজন প্রয়োজন। বাড়তি শ্রমিক লাগে মাচায় পেঁয়াজ রাখতে গেলে। আবার পেঁয়াজের রংও নষ্ট হয়ে যায়, শুকিয়ে যায়। সব দিক থেকে এই মেশিনের কার্যকারিতা ভালো। আগামী বছর আমি আরো একটি মেশিন বসাবো।

পাংশা উপজেলার মৌরাট ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের কৃষক কুরবান মিঞা বলেন, আমি গত বছর পরীক্ষা করার জন্য একটি মেশিন বসিয়েছিলাম। ফলাফল অনেক ভালো পেয়েছি। গত বছর এই হাউজের পেঁয়াজ আমি ডিসেম্বর মাসে বিক্রি করেছিলাম। কোন পেঁয়াজ পচেনি। বিদ্যুৎ বিলও খুব একটা আসেনি। এজন্য এবছর আমি দুটি মেশিন বসিয়ে ছয়শ মন পেঁয়াজ রেখেছি। আমি মনে করি মাচা থেকে এভাবে পেঁয়াজ রাখার খরচ কম। কিন্তু দীর্ঘদিন রাখা যায়। এজন্য সবারই এই পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত।

পাংশা পৌরসভার রঘুনাথপুর এলাকার কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, আমার নিজের কিছু পেঁয়াজ ছিল। আর কিছু পেঁয়াজ আমি কিনেছি। আমি এক হাজার মন পেঁয়াজ রাখবো। এজন্য আমি তিনটি মেশিন বসিয়েছি। যারা ব্যবহার করেছে গত বছর এমন চার থেকে পাঁচজনের সাথে কথা বলেছি। তারা বলেছে আসলেই এই মেশিনের কার্যকারিতা অনেক ভালো।

শাহীন মেশিনারীজের স্বত্বাধিকারী শাহীন মন্ডল বলেন, আমি দুই বছর আগে এই মেশিন ১০টি বানিয়ে বিক্রি করেছিলাম। গত বছর ৪০টি বিক্রি হয়েছিল। এবছর এই মেশিন অনেক বিক্রি হয়েছে। আমি ৩ শতাধিক মেশিন বিক্রি করেছি আমাদের রাজবাড়ী, পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলার কৃষকের কাছে। এছাড়া পাবনা থেকেও অনেক পেঁয়াজ চাষি আমার কাছ থেকে এই মেশিন তৈরি করে নিয়ে গেছে। গত দুই বছর যারা ব্যবহার করেছে তারা কিন্তু কখনো খারাপ বলেনি। কৃষি বিভাগ এই মেশিন বিভিন্ন মেলাতে প্রদর্শন করেছে।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. শহিদুল ইসলাম বলেন, কয়েক বছর আগে সদর উপজেলায় এই এয়ার ফ্লো মেশিন পানি উন্নয়ন বোর্ড পরীক্ষামূলক ভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য চাষিদের প্রদান করে।

কিন্তু তখন এটি এমন সারা পড়েনি। শাহীন ওই টা দেখেই বানানো শিখেছিল। এই পদ্ধতিতে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করে। খুবই ভালো পদ্ধতি। আমরা চাষিদের এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণের জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে চাষিদের মাঝে এই এয়ার ফ্লো মেশিন বিনামূল্যে সরকারিভাবে বিতরণ করব।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram