মোঃ সাইফুল ইসলাম, কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) প্রতিনিধি: কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার লোহাজুরী ইউনিয়নের পূর্বচর পাড়াতলা গ্রামে প্রায় তিন মাস ধরে প্রশাসনের রহস্যজনক নিরব ভূমিকায় তিন ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করছে একটি প্রভাবশালী চক্র। টপসয়েল বা ঊর্বর মাটি কেটে নেওয়ায় নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি ও চারপাশের পরিবেশ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ট্রাকের পর ট্রাক ও ভেকু দিয়ে অবৈধ মাটি কাটার উৎসব চললেও নিরব রয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। স্থানীয়রা মনে করছেন প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এ এলাকায় সরব রয়েছে অপরাধী চক্র।
নদীর কাছাকাছি জমি হওয়ায় বর্ষাকালে নদী ভাঙনের সম্ভাবনা রয়েছে প্রবল। প্রতিবছরেই এ এলাকায় নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয় অনেক পরিবার। বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে শুরু হওয়া মাটি কাটার উৎসব যেন থামছেই না। ক্ষমতার হাত বদলের সাথে সাথে অপরাধী চক্রের লোকজনের রিপ্লেসমেন্ট হয়েছে নতুনরুপে। এদের অবৈধ কাজ বন্ধ করার যেন কেউ নেই। সারা দেশে যখন ফসলি জমির মাটি কাটা নিয়ে হার্ডলাইনে রয়েছে সরকার, সেখানে এ অঞ্চলে কোন যাদুর কাঠির ইশারায় নির্দ্বিধায় চলছে অপরাধী চক্রের মাটি কাটার উৎসব।
কৃষকদের অভিযোগ শুনার যেন কেউ নেই। কৃষি জমি থেকে ভেকুর সাহায্যে মাটি কেটে চলছে রমরমা ব্যবসা। বিশালাকার গর্ত করে নিয়ে যাচ্ছে মাটি, গর্তের মধ্যে দাঁড়িয়ে উপরে তাকালে মনে হয় পাহাড়ের চুড়া। আইল বরাবর গর্ত করায় পাশের ফসলি জমিগুলো ভেঙে গর্তের মধ্যে বিলীন হওয়ার পথে। মাটি পরিবহনের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে প্রতিদিন বিশ থেকে পঁচিশটি অবৈধ ট্রাক্টর। নিয়মিত মাটি পরিবহনের কারনে সরকারি অর্থায়নে নির্মিত রাস্তাগুলো ভেঙে খানাখন্দে যাচ্ছে। পরিবহন রাস্তা সংলগ্ন এলাকায় একটি কলেজ (মুন্সী আবদুল হেকিম কারিগরি মহাবিদ্যালয়), সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জালাল উদ্দিন দাখিল বালিকা মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরাও পড়েছেন চরম বিপাকে। ট্রাক্টরের প্রচন্ড শব্দে বিঘ্নিত হচ্ছে লেখাপড়ার পরিবেশ।
এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। বর্তমানে রাজনৈতিক সরকার না থাকলেও একটি রাজনৈতিক দলের পরিচয়ে বেশকিছু কুচক্রীমহল করছে এমন অপরাধ।
স্থানীয় কয়েকজন সংবাদ কর্মী মাটি কাটার বিষয়ে প্রশাসনকে অবহিত করলে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে কটিয়াদী মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ তরিকুল ইসলাম এর নেতৃত্বে একদল পুলিশ সংবাদকর্মীদের সাথে নিয়ে মাটিকাটা অঞ্চল পরিদর্শন করতে যায়। সরেজমিনে মাটিকাটার বিষয়টি পুলিশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের (অনিরাপদ) ঘটনাস্থলে রেখেই চলে আসে। মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত ভেকু মেশিন এবং ট্রাক্টর তখনো ঘটনাস্থলে অবস্থান করছিলো।
পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিক কোনো ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। পরে, সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাবনী আক্তার তারানা'র কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি একজন মোবাইলে তাকে অবহিত করেছিলেন।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলেন, পুলিশ প্রশাসন ঘটনাস্থলে গিয়ে কোনো ভূমিকা তো রাখেইনি বরং এত রাতে কেন পুলিশকেই আসতে হলো এমন প্রশ্ন করে কনস্টেবল অফিসার ইনচার্জের সামনেই সংবাদকর্মীকে অপদস্থ করেন এবং বিভিন্ন হুমকি ধমকি দেয়। এ বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।