মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি: নেত্রকোনার মদনে চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে ২ কিশোর। তাদের কে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেন খোদ মোবাইলের মালিক। এ ঘটনায় ভিডিও চিত্র ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করায় তিন সাংবাদিক ও একজন নির্যাতন কারীর নাম উল্লেখ সহ অজ্ঞাতনামা আরও ৪/৫ জনকে আসামি করে মোশারফ হোসেন বাবুল বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেন।
চুরির দায়ে নির্যাতনের শিকার কিশোররা হলো- চানগাঁও চকপাড়া নাগবাড়ী মৃত আলতু মিয়ার ছেলে মোঃ মাজহারুল (১৩) ও পৌরসভার ইমদাদপুর সওদাগর পাড়া মৃত রফিকুলের ছেলে মোঃ জাহিদ মিয়া (১২)।
এ ঘটনার পরদিন বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) উপজেলার মহিউদ্দিন মার্কেটে এক নারীর ব্যাগ থেকে টাকা ছিনতাই করে হাতেনাতে ধরা পড়ে মাজহারুল। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এসব পেশাদার চোর কে ছাড়িয়ে নেওয়ায় স্থানীয় সুশীল সমাজের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম অসন্তোষ।
আসামিরা হলেন- সাংবাদিক সুদর্শন আচার্য্য (৪২), পরিতোষ দাস (৫০), মোঃ তানভির (২৫) ও বাসের হেলপার সোকেল মিয়া (২৫)।
জানা গেছে, বুধবার (১৯ মার্চ) সকালে মদন উপজেলার সিলেট বাসস্ট্যান্ড এলাকার একটি বাস থেকে তিনটি মোবাইল সহ নগদ কিছু টাকা চুরি করে। এসব জিনিস নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় বাসের হেলপার তাদের হাতেনাতে ধরে। পরে তাদেরকে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় পুকুরপাড়ে একটি নারিকেল গাছে বেঁধে রাখে। এসময় কিশোররা চুরি করার বিষয়টি স্বীকারও করেন। যা ভিডিও চিত্রে স্পষ্টত উল্লেখ আছে। পরে ভিডিও চিত্র দুইজন সাংবাদিকসহ এলাকার বিভিন্ন লোকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আপলোড করে। ভিডিও চিত্র দেখে পুলিশ তাদেরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখ করে ২০ মার্চ মদন থানা মামলা দায়ের করেন। কিন্তু চোর দুজন কে রাতে পুলিশ ছেড়ে দেয়। আবার ২০ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার মহিউদ্দিন মার্কেটে এক নারীর কাছ থেকে টাকা ছিনতাই করে পালানোর সময় বাজারের সাধারণ জনতার হাতেনাতে ধরা পড়ে। এটিরও ফেসবুকে একটি ভিডিও পাওয়া যায়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মোবাইল চুরির সন্দেহ করে নারিকেল গাছের সাথে বেঁধে মারধর করে নির্যাতন করা হয়। পরে মদন থানায় খবর দিলে পুলিশ এসে দুই কিশোরকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। এ সময় নির্যাতনকারী সোকেল মিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। মারধরের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাংবাদিক সুদর্শন আচার্য ও মো. তানভির ভিডিও আপলোড করেন। এতে তাদের পরিবার ও আত্মীয় স্বজনদের মান সম্মানের হানি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহিউদ্দিন মার্কেটের ব্যবসায়ী ও দোকান কর্মচারী কয়েকজন জানান, মাজহারুল ও জাহিদ নামে দুটি ছেলে আরও বেশ কয়েকবার চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় বেপরোয়া হয়ে গেছে। বৃহস্পতিবার ২০ মার্চ মার্কেটের কেনাকাটা করতে আসা এক নারীর কাছ থেকে টাকা ছিনতাই করে পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতার হাতে ধরা পড়ে। এদেরকে আইনের আওতায় আনা হোক।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়ে জানতে চুরির দায়ে ভুক্তভোগী মোঃ মাজহারুলের চাচা মোশারফ হোসেন বাবুল মোবাইল ফোনে জানান, কি কারণে মামলা করেছি, অভিযোগে উল্লেখ আছে। নির্যাতনের ভিডিও ফেসবুকে ছাড়ার নিয়ম আছে?
মদন উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের কর্মকর্তা ইমরান জানান, চুরির দায়ে নির্যাতনের স্বীকার কিশোরদেরকে তাদের পরিবারের লোকজনের জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।
চোরের ভিডিও আপলোড করায় তিন সাংবাদিকের নামে মামলার বিষয়ে মদন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাঈম মোহাম্মদ নাহিদ হাসান জানান, বাবুল নামের ব্যক্তি থানায় অভিযোগ দিয়েছে তার ভাতিজাকে গাছে বেঁধে নির্যাতন করেছে চুরির অপবাদ দিয়ে। আমারা অভিযোগ নিয়েছি।
তদন্ত করার দায়িত্ব আমাদের। একই চোর দ্বিতীয় দিন উপজেলা মহিউদ্দিন মার্কেটে চুরি করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে। পরে মার্কেটের লোকজন তাকে আটক করে, যা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে বিভিন্ন জন আপলোড করেছে ।তাদের বিরুদ্ধেও কি কোন অভিযোগ বা মামলা হয়েছে কিনা থানায়। এ বিষয়ে তিনি জানান, এ ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি।