জাবেদ হোসাইন মামুন, সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি: ফেনীর সেনাগাজীতে প্রবাসীর স্ত্রী তানিয়া আক্তার লাইলী হত্যা মামলার গ্রেফতারকৃত আসামি নুর আফছার রনি (২৫) দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। মঙ্গলবার দুপুরে ফেনীর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মিনহাজ উদ্দিনের আদালতে ১৬৪ ধারায় এ স্বীকারোক্তি দেন।
পুলিশ জানায়, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ১৭ মার্চ সোমবার রাত দশটায় নুর আফসার রনিকে খাগড়াছড়ি জেলার রামগড় থানার পাতাছড়া ইউনিয়নের তালমনি পাড়া গ্রাম হতে এক আত্মীয়ের বাসা থেকে পুলিশ গ্রেফতার করে। তার কাছ থেকে লাইলীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। তাকে আদালতে হাজির করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন, লাইলীর সাথে তার এক বছরের অধিককাল যাবত পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সে তাকে বিয়ে করার পরিকল্পনা করেছিল। অপরদিকে বখরিয়া গ্রামের সমিরের ছেলে রনি নামের অপর এক প্রবাসী যুবকের সাথেও লাইলীর পরকীয়া প্রেম ছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে টানাপোড়েন চলছিল। লাইলীর সাথে সম্পর্কের কারণে তার স্ত্রীও শিশু সন্তানকে নিয়ে তাকে ছেড়ে চলে গেছে।
ঘটনার দিন ১৫ মার্চ রাত ৮টা ৪০ মিনিটে লাইলীর কথামতো জিলাপি নিয়ে আসামি রনি লাইলীর ভাড়া বাসায় যান। সেখানে গিয়ে তাকে প্রবাসী রনির সাথে ভিডিও কলে কথা বলতে দেখে। এতে সে ক্ষিপ্ত হয়ে মোবাইল নিয়ে যায়। তখন মোবাইল নিয়ে দুজনের মধ্যে হাতাহাতি ও তর্ক হয়। প্রবাসী রনির সাথে মোবাইলে কথা বলা, আপত্তিকর কাজ সহ তার যা ইচ্ছা তাই করবে মর্মে জানায় লাইলী। এছাড়া মোবাইল নেয়ার জন্য পিছন থেকে আসামি রনির শার্টের কলার টেনে ধরলে রনি ক্ষিপ্ত হয়ে তার গলা টিপে ধরে। এতে লাইলী ফ্লোরে বসে পড়লে তখন তাকে সোফার সাথে গলা চেপে ধরে। এরপর গলায় গামছা ও ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাইলীর মোবাইল নিয়ে সে পালিয়ে যায়। ভিকটিমের বাসার ফ্রিজ থেকে রনির দেখানো মতে ঘটনার দিন নেয়া জিলাপি উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয়।
নুর আফছার রনি সোনাগাজী সদর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি, দক্ষিণ চরখোয়াজ গ্রামের সালামত ষওদাগরের নতুন বাড়ির নুর উদ্দিনের ছেলে। লাইলী সোনাপুর গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী আরিফ উদ্দিন পিয়াসের স্ত্রী। তার দুটি পুত্র সন্তান রয়েছে। বড় ছেলের বয়স দশ বছর ও ছোট ছেলের বয়স দুই বছর চার মাস। তিনি সন্তানদের নিয়ে পশ্চিম তুলাতলী গ্রামের জনৈক শাহাব উদ্দিনের দুই কক্ষ বিশিষ্ট সেমি পাকা ঘরে ভাড়া থাকতেন। সে চরখোন্দকার গ্রামের সৌদি আরব প্রবাসী জেবল হকের কন্যা। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে তানিয়া ছিল তৃতীয়। প্রায় ১২ বছর পূর্বে আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের মো. সেলিমের ছেলে সৌদি আরব প্রবাসী পিয়াসের সঙ্গে তার বিয়ে হয়। কিন্ত লাইলীর মায়ের দাবি তার মেয়ে রনি প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে অজ্ঞাতদুর্বৃত্তরা সহ তার মেয়েকে হত্যা করেছেন।
সোনাগাজী মডেল থানার ওসি মো. বায়েজীদ আকন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।