বাগেরহাট প্রতিনিধি: বাগেরহাট জেলার ১৮ লাখ মানুষের প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র জেলার ২৫০ শয্যার হাসপাতালটির টিকিট কাউন্টার, জরুরী বিভাগ, চিকিৎসকের কক্ষ, প্যাথলজি, ফার্মেসি, ওয়ার্ড, ফ্লোর সর্বত্রই রোগীর উপচে পড়া ভীড়। ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাড়িয়ে টিকিট কেটেও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না চিকিৎসা নিতে আনা রোগীরা। জেলা ২৫০ শয্যার হাসপাতালে চিকিৎসকের ৫৯ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এখন আছে মাত্র ২৫ জন। জনবল সংকটের কারণে পহেলা জানুয়ারি থেকে ১০ শয্যার আইসিইউ ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। চিকিৎসক ও চিকিৎসা সরঞ্জামের তীব্র সংকটের কারণে এখন বাধ্য হয়ে উন্নত চিকিৎসার আশায় রোগীদের যেতে হচ্ছে রাজধানী ঢাকা বা খুলনায়।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, জেলার প্রধান এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বহির্বিভাগে গড়ে দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নেন। ২৫০ শয্যার বিপরীতে ৩৫০ থেকে ৫০০ জন পর্যন্ত রোগী ভর্তি থাকেন নিয়মিত। নামে ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতাল হলেও নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসক। ৫৯ জন চিকিৎসক থাকার কথা থাকলেও এখন আছে মাত্র ২৫ জন। ৭৪ জন সেবিকা থাকলেও প্রয়োজন আরো ২৪ জন সেবিকার। এই হাসপাতালটিকে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির ৩৭টি পদ এখন শূন্য রয়েছে। এখন এই হাসপাতালটি ১০০ শয্যার জনবল দিয়ে চললেও চিকিৎসকদের মধ্যে চক্ষু এ্যানেসথেশিয়া, সার্জারী, নাক-কান-গলা, কার্ডিওলজিসহ ৮জন সিনিয়র কনসালটেন্টের মত গুরুত্বপূর্ণ পদ ফাকা রয়েছে। জুনিয়র কনসালটেন্টের ৭টি পদ খালি রয়েছে। নেই সিটি স্ক্যান, এমআইআর, ইকো, ইটিটি, ইউরোলজি, সিরাম ইলেক্ট্রোলাইট, থাইরয়ডের পরীক্ষা, লেবরোজকপি মেশিন। মেশিন না থাকায় নেই ১০ বেডের ডায়লাইসিস ইউনিট।
চিকিৎসক, সেবিকাই নয়, তীব্র জনবল সংকট নয়, প্রয়োজনীয় ঔষধ সংকটও রয়েছে এই হাসপাতালে। ঔষধসহ অন্যান্য খাতে ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালটির জন্য ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে মাত্র ৬ কোটি টাকা। ঔষধ, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও রোগ নির্ণয়ের ব্যবস্থা না থাকায় কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয়রা। জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে রোগীরা যাচ্ছেন খুলনা-ঢাকার বিভিন্ন বড় হাসপাতালে। যার ফলে রোগীরা অর্থনৈতিক ভাবেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন, তেমনি পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। অনেককেই আবার অর্থ সংকটে বাধ্য হয়ে এখানেই পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীর স্বজন শিক্ষক মাসুদা করিম জানান, হাসাপাতালের টয়েলেটগুলো এত নোংরা যে ব্যবহার করা খুবই কষ্টকর। টয়েলেট ব্যবহারে রোগী আরও অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। শিশু বিভাগে ৪০টি শয্যার বিপরীতে শতাধিক রোগী ভর্তি থাকায় কাঙ্খিত সেবা পাওয়া যায়না।
মোরেলগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা কারুল ইসলাম জানান, এক সপ্তাহ আগে বাবাকে নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছিলাম। এখনও সুস্থ হয়নি, চিকিৎসক বলছেন সব পরীক্ষা নেই, খুলনায় নিয়ে যান। তাই বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি, টাকার ব্যবস্থা করতে পারলে খুলনা নিয়ে যাব।
টিকিট কাউন্টারে অপেক্ষারত সেকেন্দার গাজী জানান, অনেকগুলো কাউন্টার রয়েছে, কিন্তু মাত্র দুটি কাউন্টারে টিকিট কাটছে। গর্ভবতি মায়েদের কাউন্টারটিও খালি রয়েছে। যদি লোকই না থাকে তবে, কাউন্টার রেখে লাভ কি।
বুকে ব্যাথাসহ নানা অসুবিধা নিয়ে গেল বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শরণখোলা উপজেলার চালিতাবুনিয়া গ্রামের বিধবা শাহনুর বেগম। বেড না পেয়ে মেঝেতেই চলছে তার চিকিৎসা। সরকারি হাসপাতালে থেকেও, বাইরে থেকে ঔষধ কিনতে হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের দায়িত্বরত একধিক চিকিৎসক ও সেবিকারা জানান, জনবল ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাবে আমাদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক সময় রোগীরাও রাগ করে থাকেন। আমাদের কিছুই করার থাকেনা।
বাগেরহাট ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার জানান, হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার হলেও সেই জনবল এখনো পাইনি। এখনো ১০০ শয্যার জনবলে চলছে। এরমধ্যে হাসপাতালটিতে ৫৯টি প্রথম শ্রেণির পদের মধ্যে আছে ২৫ জন রয়েছে। এছাড়া অন্যান্য পদেও চরম জনবল সংকট রয়েছে। স্বাস্থ্য সেবার অনেক যন্ত্রপাতির সংকটও রয়েছে। রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরপরেও আমরা রোগীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করছি। জনবলসহ অন্যান্য সংকটের বিষয়টি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।