এস এম আকাশ, চট্টগ্রাম: মেয়ে সেজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রভাবশালীদেরকে ব্ল্যাকমেইল আর প্রতারণা করে টাকা আদায়ের কারণে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা ১৫ নং ছদাহা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড ওবাইদুল হক মুন্সীর বাড়ির মৃত আব্দুল্লাহ এর ছেলে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের আলোচিত নেতা জোবায়রুল হক জিয়ান (২৮) সাতকানিয়া থানা পুলিশের হাতে শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) রাত নয়টায় নিজ বাড়ি থেকে আটক হয়। গ্রেফতারের বিষয়ে সাতকানিয়া থানার সাব ইন্সপেক্টর আনোয়ার ও বেলাল নিশ্চিত করেন।
এলাকাবাসী সূত্রে খবর নিয়ে জানা যায় ব্ল্যাকমেইলিং ও প্রতারণার অভিযোগে কয়েকবছর আগে জেল খেটেছে তিনি। জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি ফের পুনরায় প্রতারণার পাশাপাশি মামলা নিয়ে বাণিজ্য করে যাচ্ছিল৷বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করিয়ে দেওয়া এবং পরবর্তীতে জামিন আর মামলা থেকে অব্যাহতির নামে ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন তিনি। সর্বশেষ গত ৪ আগস্ট সাতকানিয়ার কেরানিহাট এলাকায় দেশীয় অস্ত্র হাতে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করে বলে অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ফ্যাসিস্ট আমলে নির্যাতনের ভুক্তভোগী বিএনপি জামাতের নেতাকর্মীদের দাবীর প্রেক্ষিতে শুক্রবার রাতে আনুমানিক নয়টায় ডেভিল হান্ট অভিযানের অংশ হিসেবে সাতকানিয়া থানা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন।এতদিন পুলিশের সঙ্গে সখ্যতা থাকার কারণে এসব ঘটনায় একাধিক মামলা দায়ের হলেও এগুলোতে নাম নেই জিয়ানের। উল্টো এখনো পুলিশের যোগসাজশে এলাকার নিরীহ লোকদের মামলা ও গ্রেপ্তার করিয়ে আসছিল। পুলিশের সখ্যতায় সম্প্রতি জামায়াত কর্মী ঢাকার এক ব্যবসায়ীকে মামলায় জড়ান এবং গ্রেফতার করান। মামলা বানিজ্য ও ব্ল্যাকমেইলিং যেন তার নেশা। যাকে শত্রু হিসেবে সন্দেহ হবে তাকে মামলায় জড়িয়ে দেয় আর না হয় ভিপিএন ইউজ করে নারী কন্ঠের মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল করে। তার ব্ল্যাকমেইলিং থেকে অনেক পুলিশ ও রেহায় পায়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী জানান বিগত স্বৈরাচারের আমলে এত অপকর্ম করার পর ও তার বিরুদ্ধে বর্তমান প্রশাসন ব্যবস্থা নেয়নি তাকে গ্রেফতারে আমরা ভুক্তভোগীরা স্বস্তির নি:স্বাস ফেলছি আমরা দ্রুত তার দৃষ্টাদন্তমূলক শাস্তি দাবী করছি। বিগত পনের বছর তার নির্যাতনের বিচার দাবী করছি।
অনুসন্ধানে জানা যায়,জোবাইরুল হক জিয়ান সাতকানিয়ার ছদাহা ইউনিয়নের ছৈয়দাবাদ ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আব্দুল আজিজ ওরফে আবদুল্লাহর ছেলে। ২০১৫ সালে স্কুলজীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়ান। তিনি চিববাড়ী হাই স্কুলের সভাপতি ছিলেন তবে শিক্ষার গন্ডি অষ্টম শ্রেণি পার করতে পারেনি। পরবর্তীতে ২০২০-২০২২ সালের উপজেলা ছাত্রলীগের শিক্ষা ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।
২০২০ সালে ২৯মে সাতকানিয়া থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হয় জোবাইরুল জিয়ান। ওইসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জিপিএইচ ইস্পাতের মালিকের পরিবারের এক মেয়ের ছবি ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা ছাড়াও চট্টগ্রাম মহানগরের দুই প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা,সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই নেতা, মহানগর ছাত্রলীগের এক নেতা এবং সাতকানিয়া উপজেলা যুবলীগের এক নেতার সঙ্গে প্রেমালাপ করে আসছিল। ওইসময় প্রেমালাপ করে নানা অজুহাতে টাকা চাইত। ওইসময় যারা টাকা দেননি তাদের স্ক্রিনশট ফাঁস করার ভয় দেখাতেন। এভাবে অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার পর একপর্যায়ে গ্রেপ্তার হয়। গ্রেপ্তারের পর নগরের পাঁচলাইশ থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছিল।
২০২০ সালের মে মাসে ব্ল্যাকমেইলিং ও প্রতারণার অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জিয়ান সাতকানিয়া পুলিশের তৎকালীন সার্কেল হাসানুজ্জামান মোল্লা ও তার শালিকাকে ব্ল্যাকমেইলিং করে চাঁদা আদায়, সাতকানিয়া পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বিএনপি নেতা মো. সেলিমকে ব্ল্যাকমেইল করে নিয়মিত বিকাশে টাকা আদায়, সাতকানিয়া পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এনামুল হকের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল আদায় করার কথা স্বীকার করে। এছাড়াও প্রতারক জিয়ান ছদাহা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহফুজ, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. হাসান ও মো.আরিফ,ছদাহা ছমদিয়া পুকুর পাড়ের ডা. শাব্বির, ছৈয়দাবাদ মাদ্রাসার শিক্ষক জাকরিয়াকে (বিএড) এর ছেলেকএ মিথ্যা মামলা দেয় প্রত্যেকের কাছ থেকে পরে এক লক্ষ টাকা আদায় করেছিল চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়ার কথা বলে। গত আওয়ামী আমলে শত শত নিরীহ মানুষ কে মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছিল এই জিয়ান নামক প্রতারক।