ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: প্রশাসনের তদারকি না থাকায় অস্বাস্থ্যকর ও মানহীন উপায়ে খাদ্যপণ্য তৈরি হচ্ছে ময়মনসিংহের ত্রিশালের বেকারিগুলোতে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে উপজেলার পৌর শহর ও গ্রামগুলোয় গড়ে উঠেছে অসংখ্য অনুমোদনহীন বেকারি ও খাদ্য তৈরির কারখানা। এসব কারখানায় নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে অস্বাস্থ্যকর ও মানহীন খাদ্যপণ্য। উৎপাদিত খাবারের মাণ নির্ণয় নিশ্চিত না করায় কর্তৃপক্ষের নিয়মিত মনিটরিং না থাকাকেই দুষছেন সচেতন মহলের ব্যক্তিরা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পৌর এলাকাসহ ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে পরিবেশ ছাড়পত্র ও অন্যান্য অনুমোদনের কাগজপত্র ছাড়াই উপজেলাজুড়ে বেকারি ও খাদ্য তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। এসব বেকারি গুলোতে নোংরা, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানহীন খাদ্যপণ্য তৈরি হচ্ছে। এ সকল বেকারি ও কারখানার উৎপাদিত পণ্যে মানবদেহের জন্য ব্যাপক ক্ষতিকর বিভিন্ন রং, কেমিক্যাল ও নিম্নমানের কাঁচামাল মিশিয়ে পোড়া তেলে ভেজে পথেঘাটে হাট বাজারে বাজারজাত করা হচ্ছে। এ ছাড়া কারখানাগুলোতে শিশুদের দিয়ে করানো হচ্ছে কাজ। এসব খাদ্যপণ্য তৈরী ও বাজারজাত করে অতিরিক্ত মুনাফা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী। নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানহীন খাবার তৈরীর ফলে হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য ও আশপাশের পরিবেশ। নিন্মমানের এসব বেকারি পণ্য ক্রয় করে ক্রেতা সাধারণ যেমন প্রতারিত হচ্ছে, তেমনি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছে প্রতিনিয়ত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেকারি কর্মচারী বলেন, মালিকের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করি। তিনি যেমন পরিবেশ করেছেন তেমন পরিবেশে কাজ করতে হয়। সারাদিন কাজ করে পরদিন সকালে ভ্যানগাড়িতে করে দোকানগুলোতে সাপ্লাই দেয়া হয়।
স্থানীয় সচেতন কয়েকজন নাগরিক বলেন, বাজারে বাহারী বেকারি পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন দোকানীরা। ছোট শিশুরা না বুঝে খাচ্ছে। এসব বেকারি পণ্য নিরাপদ কিনা আমরা অনেকেই জানিনা। প্রশাসনের লোকের তদারকি না থাকার কারনেই অসাধু ব্যবসায়ীরা অলিতে গলিতে এসব পণ্য তৈরী করছে। উপজেলায় একজন স্যানিটারী ইন্সপেক্টর থাকেন তার কি কাজ আমরা জানিনা। তার তো এ বিষয়গুলো তাদারকি করা উচিত।
এসব কেমিক্যাল যুক্ত বেকারির খাদ্যে স্বাস্থ্যের ঝুঁকির আছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস.এম জিয়াউল বারী বলেন, প্রতিবছর অনিরাপদ খাদ্য গ্রহনের জন্য চার লাখ বিশ হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে। এ বিষক্রিয়া দিয়ে তৈরি পণ্য গুলো শিশু থেকে বৃদ্ধ যেই খাবে না কেন, সবারই বিভিন্ন জটিল রোগ ও ক্যান্সারের মতো মরণব্যাধী রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারে। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা উচিৎ।
উপজেলা স্যানিটারী ইন্সপেক্টর ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, বেকারি কারখানা গুলোতে আমি তদারকি করছি। তবে ইউএনও ও এসিল্যান্ড স্যার মোবাইল কোর্ট করলে আমাকে অবগত করেন না। তবে আমি এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবগত করে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবো।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী এ বিষয়ে বলেন, আমি এ বিষয়ে অবগত ছিলাম না, পর্যায়ক্রমে সবগুলো কারখানায় স্যানিটারী ইন্সপেক্টরকে সাথে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করবো। যদি অবৈধ ভাবে তারা কারখানা পরিচলনা ও কেমিক্যাল ব্যবহার করে থাকে তবে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে।