ঢাকা
৩০শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১:৫৫
logo
প্রকাশিত : জানুয়ারি ৭, ২০২৫

কাপাসিয়ায় চলছে পলিথিন ব্যবহারের মহোৎসব

কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি: গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার সব হাট-বাজারে মুদি দোকান থেকে শুরু করে মাছ, মাংস, শাক-সবজি, ডিম, তরকারি, ফল ও মিষ্টির দোকানসহ সব ক্ষেত্রেই দিন দিন বাড়ছে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবহার। একদিকে পলিথিনের বিপরীতে টিকে থাকার মতো কোন ব্যাগ বাজারে না থাকা, অন্যদিকে আইন বাস্তবায়নের কোন উদ্যোগ না থাকায় সচেতন মানুষের হাতেও দেখা যাচ্ছে পলিথিনের ব্যাগ। পলিথিনের যেনতেন ব্যবহারে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ, ক্ষতি হচ্ছে কৃষি জমির। এ দূষণ বন্ধে প্রশাসনের নেই জোরালো কোন উদ্যোগ।

তবে প্রশাসন বলছে, পলিথিন ব্যবহার বন্ধে প্রশাসনিক তৎপরতা জোরদার করা হচ্ছে। পলিথিনের অবাধ ব্যবহার বন্ধের মাধ্যমে কৃষি আর পরিবেশ রক্ষায় ২০০২ সালে বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন সংশোধন করা হয়। ২০০২ সালের ১ মার্চ ৯ নম্বর আইনটির সংশোধনী জাতীয় সংসদে পাশের মধ্য দিয়ে পলিথিন শপিং ব্যাগ বা পলিইথাইলিন বা পলিপ্রপাইলিনের তৈরি কোন সামগ্রী, তৈরি, আমদানি, বিক্রি ও বিক্রির জন্য প্রদর্শন, মজুদ বা বিতরণ নিষিদ্ধ করা হয়। এর ব্যত্যয় হলে জেল-জরিমানার বিধান রয়েছে। অথচ এ আইন লঙ্ঘন করেই প্রশাসনের নাকের ডগায় দেদারসে বিক্রি হচ্ছে পলিথিন ব্যাগ।

কাপাসিয়া বাজারের দোকানপাট ও উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে সরেজমিন দেখা যায়, ক্রেতাদের অধিকাংশ মানুষের হাতেই সদাই ভর্তি পলিথিনের ব্যাগ। তাই সবজি, মাছ, মাংস, ডাল যা-ই কিনছেন তার জন্য নিতে হচ্ছে আলাদা আলাদা পলিথিন ব্যাগ। শক্ত ও মজবুত পলিথিন ব্যাগে ১০ কেজি পর্যন্ত মালামাল বহন করা যায়। বাজারে পণ্য কিনলেই তা বহনের জন্য বিক্রেতারা পলিথিন ব্যাগ দিয়ে দেন যার কারণে ক্রেতারা বাসা-বাড়ি থেকে ব্যাগ আনেন না। আবার অনেক ক্রেতা পলিথিন ব্যাগ না দিলে সেই দোকান থেকে পণ্য কিনতে চান না এমন অভিযোগ বিক্রেতাদের।

উপজেলার কাপাসিয়া সদর বাজার, আমরাইদ বাজার, বীর উজুলী বাজার, টোক বাজার, গিয়াসপুর বাজার, আড়াল বাজার, রানীগঞ্জ বাজার, চাদপুর বাজারসহ কয়েকটি বাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, পলিথিন ব্যাগ তৈরি হয় রাজধানী ঢাকাসহ বড় বড় শহরে। সেখান থেকে হাতবদল হয়ে প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় ডিলারদের নিকট চলে আসে এসব পলিথিন ব্যাগ। সেখান থেকে খুচরা বিক্রেতারা এসে দোকানে দোকানে ঘুরে বিক্রি করেন এসব পলিথিন ব্যাগ। ব্যবসায়ীদের ভাষ্যমতে কাপাসিয়া উপজেলার সব বাজারে প্রতি সপ্তাহে প্রায় লক্ষাধিক পলিথিন ব্যাগ বিক্রি হয়।

উপজেলার কাপাসিয়া গ্রামের মোঃ সিদ্দিকুর রহমান রতন বলেন, এখন আর বাজার করতে গেলে ব্যাগ কিনতে হয়না। কিছু কেনার সময় বিক্রেতারাই পণ্য পলিথিনের ব্যাগে ভরে দেয়। আবার অনেক মুদি দোকানে বিভিন্ন মালামাল আধা কেজি, এক কেজি, দুই কেজি করে পলিথিন ব্যাগে ভরে রেখে দেয় বিক্রির সুবিধার্থে। কাগজের মোড়ক বা পাটের তৈরি কোন ব্যাগই বাজারে নেই।

পরিবেশ নিয়ে কাজ করা কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজের (অবসরপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, নিষিদ্ধ এই পলিথিন একই সঙ্গে কৃষিজমি, নদী-নালা, খাল-বিল ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করে। এটি একটি অপচনশীল প্লাস্টিক জাতিয় পদার্থ, যা দীর্ঘদিন পর্যন্ত অপরিবর্তিত এবং অবিকৃত থেকে মাটি ও পানি দূষিত করে। এতে মাটির উর্বরাশক্তি ও গুণাগুণ নষ্ট হয়ে ফলন কমে যায়। এর বাইরে যত্রতত্র পলিথিন পড়ে থাকা, আগুনে পোড়ালে বাতাস দূষিত করা এবং পয়নিষ্কাসনে বাধা তৈরিসহ নানাভাবে পরিবেশকে দূষিত করে। আমাদের সরকার ও রাষ্ট্রের তেলমাখানো প্রচেষ্টায় আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এর উৎপাদন ও ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব নয়। দেখা যায়, সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এই আইনটি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টদের কাছেই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। এ থেকে উত্তরনের উপায় হলো রাষ্ট্রের অগ্রাধিকার কাজের ভিত্তিতে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে পলিথিনের উৎপাদন বন্ধ করা এবং এর বিকল্প পণ্য বাজারজাত করে পরিবেশকে রক্ষা করতে হবে বলে জানান তিনি।

গত ২০২৪ সালের ২৭ অক্টোবর সচিবালয়ে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ সভায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছিলেন, ১ নভেম্বর থেকে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে কঠোর মনিটরিং চালু করা হবে। পলিথিন উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। কিন্তু তা বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনের তেমন ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়নি।

ক্ষতিকর পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে সচেতনতা সৃষ্টির কথা জানালেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তামান্না তাসনীম। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করার আশার কথাও শোনালেন তিনি।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram