বৈরী আবহাওয়া হলেই মহেশখালীতে সাগরে অবস্থিত ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। এতে এলএনজির ওপর নির্ভরশীল চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে দুর্ভোগ নেমে আসে। ইতিমধ্যে অসংখ্যবার খারাপ আবহাওয়ায় চট্টগ্রামে এলএনজি সরবরাহ বিঘ্ন ঘটে। সংশ্লিষ্টরা জানান, চট্টগ্রামে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য মহেষখালীতে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল জরুরি হয়ে পড়েছে। গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হলে চট্টগ্রামে শিল্প কারখানা, বাণিজ্যিক ও আবাসিক খাতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
বর্তমানে বিরাজমান এলএনজি টার্মিনাল থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এলএনজি সরবরাহ চালু করা হয়। দুটি ভাসমান টার্মিনাল থেকে এলএনজি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। এলএনজি সরবরাহ শুরু হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিড থেকে প্রাকৃতিক গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে না। এতে চট্টগ্রামে গ্যাসের চাহিদা সম্পূর্ণভাবে এলএনজি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বৈরী আবহাওয়ায় সাগর উত্তাল থাকলে এলএনজি সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা যাচ্ছে না। সরবরাহ বিঘ্ন ঘটলে চট্টগ্রামে গ্যাস নিয়ে চরম ভোগান্তি নেমে আসে। ইতিপূর্বে ভাসমান টার্মিনালে সৃষ্ট সমস্যায় এলএনজি সরবরাহ কয়েকবার বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিগত সময়ে মহেষখালীতে ল্যান্ড বেইজ স্টোরেজ নির্মাণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সমতলে সার্ভে করা হয়েছিল। কিন্তু যে জায়গায় টার্মিনাল নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল তা পিডিবির মালিকানাধীন জায়গা। ফলে জায়গা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিষয়টি আর অগ্রগতি হয়নি। কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখতে হলে মহেষখালীতে ল্যান্ড বেইজ স্টোরেজ নির্মাণ করতে হবে। কারণ এলএনজি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যায় না। এতে চট্টগ্রামে শিল্পকারখানা, বাণিজ্যিক ও আবাসিক খাতে চরম ভোগান্তি নেমে আসে।
তবে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, সরকার স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা কাতার সফরের সময় কাতার এনার্জির সঙ্গে একটি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। শিগগিরই স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন করা হবে।
এই প্রসঙ্গে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির মহাব্যবস্থাপক (অপারেশন) প্রকৌশলী আমিনুর রহমান বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এলএনজি সরবরাহে সমস্যা হচ্ছে। নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের জন্য স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করা দরকার। চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে স্থলভিত্তিক টার্মিনালের প্রয়োজনীয়তা জরুরি হয়ে পড়েছে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে মার্কিন কোম্পানি এক্সিলারেট এনার্জি একটি ও দেশীয় সামিট গ্রুপের একটি এফএসআরইউ (ফ্লোটিং স্টোরেজ অ্যান্ড রি-গ্যাসিফিকেশন ইউনিট) রয়েছে। বর্তমানে বিরাজমান স্টোরেজে পাঁচ-ছয় দিনের গ্যাস মজুত রাখা যায়। যদি স্থলভিত্তিক এফএসআরইউ করা হয়, তাহলে কমপক্ষে এক মাসের গ্যাস মজুত রাখা যাবে। তখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও এলএনজি সরবরাহ বিঘ্নিত হবে না। বর্তমানে সাগর উত্তাল হলেই ভাসমান টার্মিনাল এরএনজিবাহী কার্গো বার্থিংয়ে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বর্তমানে বিরাজমান দুটি ভাসমান টার্মিনাল থেকে দৈনিক প্রায় ১২০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহের সক্ষমতা রয়েছে। সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে দৈনিক ১ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বা তার চেয়ে কিছুটা বেশি এলএনজি সরবরাহ দেওয়া হয়। গতকাল বুধবার ১ হাজার ৫০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি সরবরাহ দেওয়া হয়েছে বলে জিটিসিএল সূত্র জানায়। তার মধ্যে চাহিদা বেশি থাকা সত্ত্বেও চট্টগ্রামে দৈনিক ২৬০-২৭০ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে না। কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির এক কর্মকর্তা জানান, বর্তমানে চট্টগ্রামে চার-পাঁচটি শিল্প কারখানা অবকাঠামো নির্মাণ ও মেশিনারি সরঞ্জাম স্থাপন করে উত্পাদনের উপযোগী করলেও গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় উৎপাদনে যেতে পারছে না। এসব প্রতিষ্ঠান সংযোগের জন্য গ্যাস কোম্পানিকে ডিমান্ড নোটের প্রয়োজনীয় টাকাও পরিশোধ করেছেন।
চট্টগ্রামে হাজারো রপ্তানিমুখী পণ্য উৎপাদনকারী শিল্পকারখানা রয়েছে। রয়েছে সরকারি বেসরকারি কয়েকটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দুটি সার কারখানা। গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত ঘটলেই এসব কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। চট্টগ্রামের শিল্পোদ্যোক্তাদের দাবি যেহেতু চট্টগ্রামে জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে না। তাই গ্যাস সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন জরুরি।
