‘জনগণের ভোট ছাড়া’ নির্বাচন সম্পন্ন করা, রাষ্ট্রদ্রোহ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে করা মামলাকে ত্রুটিপূর্ণ দাবি করে তার আইনজীবী আদালতকে বলেছেন, মামলাটি ‘আইনগতভাবে চলার সুযোগ’ নেই।
এই আইনজীবী বলেন, রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করবে সরকার, ব্যক্তি করেছে এমন ঘটনা ‘বিরল’।
শুক্রবার ঢাকার মহানগর হাকিম আওলাদ হোসাইন মুহাম্মদ জোনাইদের আদালতে সাবেক সিইসি নূরুল হুদার রিমান্ড শুনানিতে এসব কথা বলেন তার পক্ষে আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম সজিব।
গত রোববার গ্রেপ্তারের পর সোমবার নূরুল হুদাকে চার দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। সেই রিমান্ড শেষে শুক্রবার তাকে আদালতে হাজির করে তদন্ত কর্মকর্তা পুনরায় দশ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, নূরুল হুদা প্রধান নির্বাচন কমিশনার থাকাকালে ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘পাতানো’ ছিল এবং এটি ‘দাপ্তরিক সংঘবদ্ধ অপরাধ’। তিনি ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য’ দিয়েছেন, যা যাচাই-বাছাই ও পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারে সহায়তা করবে।
রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, ‘এই মামলাটি জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ। আজকের আসামি বাংলাদেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান ছিলেন। তিনজন সাবেক সিইসির কারণে দেশে ফ্যাসিস্টের জন্ম হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিরোধী রাজনৈতিক দলকে আওয়ামী লীগ পিটিয়ে রাজপথ ছাড়া করেছে। রাত ৩টার মধ্যে ২০০ প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল।’
নূরুল হুদার পক্ষে তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘২৩ জুনের রিমান্ড আবেদনের সঙ্গে আজকের আবেদনে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। পূর্বের রিমান্ডে কী পাওয়া গেল তা আবেদনে নেই।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার আগে সরকারের অনুমতি প্রয়োজন। এখানে তা হয়নি। মামলা ত্রুটিপূর্ণ, আইনি বাধা রয়েছে।’
তৌহিদুল বলেন, ‘নূরুল হুদা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও গেরিলা যোদ্ধা ছিলেন। স্বাধীনতার প্রশ্নে তার অবদান রয়েছে। রিমান্ডে তাকে নিয়ে যদি কিছুই জিজ্ঞাসা না করা হয়, তাহলে এটা শুধু হয়রানি।’
আদালত তখন বলেন, ‘সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন, কিন্তু রাতের ভোট নিয়ে কিছু বললেন না।’ জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘এ বিষয়ে কোনো সংবাদমাধ্যম কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি।’
পরে আদালত চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান শেরেবাংলা নগর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় তিনজন সাবেক সিইসি, তাদের সময়কার নির্বাচন কমিশনার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক আইজিপিসহ একাধিক ব্যক্তিকে আসামি করা হয়।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতাকর্মীদের ভয়ভীতি ও গ্রেপ্তারের মাধ্যমে ভোট থেকে দূরে রাখা হয় এবং ‘ভুয়া বিজয়’ ঘোষণা করা হয়। মামলার ধারাগুলোতে রাষ্ট্রদ্রোহ, প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
নূরুল হুদার পর সাবেক সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়ালকেও গ্রেপ্তার করা হয় এবং তিনি তিন দিনের রিমান্ডে আছেন।