জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের অপসারণ ও প্রতিহিংসামূলক সব বদলি আদেশ বাতিল না হলে আগামী শনিবার (২৮ জুন) থেকে কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। পরিষদের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে রাজস্ব খাতের বর্তমান অচলাবস্থা প্রকটতর হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কমপ্লিট শাটডাউন হলে এনবিআরসহ সারা দেশের সব আয়কর-ভ্যাটের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
সেই সঙ্গে কাস্টম হাউস বন্ধ থাকবে। ফলে বন্ধ থাকবে পণ্য আমদানি। জানা গেছে, কমপ্লিট শাটডাউন পালন করা হলে রপ্তানিকে তার আওতার বাইরে রাখা হবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কর্মসূচি পালন করা হলে সংকুচিত হবে রাজস্ব আয়ের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথ।
ব্যয় মেটাতে সরকারকে দেশি-বিদেশি উৎস থেকে উচ্চ সুদে আরো ঋণ নিতে হবে। ফলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পাশাপাশি বেসরকারি খাতকে বেকায়দায় পড়তে হতে পারে।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন পরিষদের সভাপতি অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার ও মহাসচিব অতিরিক্ত কর কমিশনার সেহেলা সিদ্দিকা। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এনবিআরের বর্তমান চেয়ারম্যান সরকারের একটি নির্দিষ্ট ‘এজেন্ডা’ বাস্তবায়নে লিপ্ত থেকে রাজস্বব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করছেন।
তাঁকে ‘আওয়ামী লীগ সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী আমলা’ এবং ‘প্রশাসনের মধ্যে বিভাজন ও শৃঙ্খলাভঙ্গের উসকানিদাতা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
অভিযোগ তুলে বলা হয়েছে, আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় আয়কর বিভাগের পাঁচজন কর্মকর্তাকে প্রতিহিংসা ও নিপীড়নমূলকভাবে বদলি করা হয়েছে। বদলির এসব আদেশ চাকরিবিধির পরিপন্থী ও অবৈধ। জানা গেছে, গত রবিবার পাঁচজন আয়কর কর্মকর্তাকে জরুরি ভিত্তিতে বদলির আদেশ জারি করে এনবিআর। বদলি হওয়া কর্মকর্তারা হলেন উপকর কমিশনার শাহ মোহাম্মদ ফজলে এলাহী।
তাঁকে আয়কর গোয়েন্দা থেকে ময়মনসিংহ কর অঞ্চলে বদলি করা হয়েছে। ঢাকা কর অঞ্চল-১৬-তে কর্মরত ছিলেন উপকর কমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম, তাঁকে খুলনায় বদলি করা হয়েছে। উপকর কমিশনার মো. আব্দুল্লাহ ইউসুফকে এনবিআর থেকে বগুড়ায়, উপকর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিলকে আয়কর গোয়েন্দা থেকে কুমিল্লায় ও উপকর কমিশনার নুসরাত জাহান শমীকে কর অঞ্চল কুমিল্লা থেকে রংপুরে বদলি করা হয়েছে।
আদেশে তাঁদের মঙ্গলবারের (আজকের) মধ্যে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতে এবং সোমবারই (গতকাল) বর্তমান কর্মস্থলে দায়িত্ব হস্তান্তরের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, এ আদেশ সোমবারের মধ্যে বাতিল না হলে মঙ্গল ও বুধবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কলম বিরতি, অবস্থান কর্মসূচি এবং এনবিআর চেয়ারম্যান ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ চলবে। আগামী শুক্রবারের মধ্যে দাবি না মানা হলে পরদিন শনিবার থেকে লাগাতার ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ পালিত হবে। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা ও রপ্তানি কার্যক্রম এ কর্মসূচির আওতামুক্ত থাকবে।
এর আগে গত মে মাসে রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকে দুই ভাগ করে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে দুটি পৃথক বিভাগ গঠনের অধ্যাদেশ জারি করে। এর প্রতিবাদে কর্মকর্তারা কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচিতে নামেন। আন্দোলনের মুখে সরকার পিছু হটলেও এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ না হওয়ায় অসন্তোষ থেকে যায়। চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রশ্নবিদ্ধ কর্মকর্তাদের স্পর্শকাতর দায়িত্বে নিয়োগ, বাইরের লোক জড়ো করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে উসকানি সৃষ্টির চেষ্টা ও আন্দোলনকারীদের হুমকি-ধমকি দিয়ে রাজস্ব পরিবেশকে অস্থিতিশীল করেছেন। আন্দোলনকারী ঐক্য পরিষদ হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এসব কর্মকাণ্ডের ফলে রাজস্ব আহরণ ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, চেয়ারম্যান ও তাঁর কাছের কয়েকজন কর্মকর্তা ছাড়া আন্দোলনে প্রায় শতভাগ কর্মকর্তাই যোগ দিয়েছেন। এনবিআর চেয়ারম্যানের অনুগতরা এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে বিভিন্নভাবে ট্যাগিং দেওয়া ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। ‘কেমন এনবিআর চাই’ শীর্ষক সেমিনার আয়োজনের জন্য এনবিআরে সভা করতে চাইলেও তার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। নিজেদের ইচ্ছামতো ছয় সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে ঐক্য পরিষদের সঙ্গে আলোচনা না করেই। এ ছাড়া আয়কর বিভাগের পাঁচজন কর্মকর্তাকে তাৎক্ষণিক বদলির পর এই তালিকা আরো দীর্ঘ করারও হুমকি দিয়েছেন তাঁরা। যুগ্ম কর কমিশনার ও অতিরিক্ত কর কমিশনারদের মধ্যে কয়েকজনকে শিগগিরই বদলির বন্দোবস্ত করছেন চেয়ারম্যানের আজ্ঞাবহরা। কাস্টমস কর্মকর্তাদের বদলির আদেশও তৈরি করে ফেলেছেন। তবে এতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পরিবর্তে আরো ঘোলাটে হওয়ার আশঙ্কা করছেন পর্যবেক্ষকরা।