মেয়াদ শেষ হলেও শেষ হয় না প্রকল্পের কাজ। আগামী জুন মাসে ৪০৪ প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও কাজ শেষ না হওয়ায় সেগুলো নতুন ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। এই প্রকল্পগুলোকে তারকা চিহ্ন দিয়ে রাখতে বলেছে পরিকল্পনা কমিশন। আজ রবিবার পরিকল্পনা কমিশনে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) বৈঠকে নতুন অর্থবছরের এডিপি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে।
এনইসি সভায় ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন বাজেট বা এডিপি অনুমোদন দিতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। সভায় সভাপতিত্ব করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও এনইসি চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
এডিপি দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করে পরিকল্পনা কমিশনের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয় গত ৬ মে। ওই সভায় নতুন অর্থবছরের জন্য এক হাজার ১৭১টি প্রকল্প এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়।
তা ছাড়া আগামী অর্থবছরের মধ্যে ২৫৮টি প্রকল্প বাধ্যতামূলকভাবে শেষ করার কথা বলা হয় সভায়। মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর ফলে কী ধরনের সমস্যা হয় জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ‘চার শতাধিক মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্প, আগের মতোই সংখ্যাটা বেশ বড়। এডিপিতে প্রায় এক হাজার ২০০ প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত আছে। তার মধ্যে চার শই যদি মেয়াদোত্তীর্ণ প্রকল্প হয়ে থাকে, সেটা তো এডিপি প্রকল্প ব্যবস্থাপনায় একটা বড় দুর্বলতা যে রয়ে গেছে সেটারই ইঙ্গিত দেয়।
তিনি বলেন, ‘এ চার শ প্রকল্পের কোনোটাই যে উত্তীর্ণ করার প্রয়োজন ছিল না তা নয়, বা উত্তীর্ণ করলে উপকার হবে না তা-ও নয়। কিন্তু সময়মতো যে আমরা প্রকল্প শেষ করতে পারি না সেটির ধারাবাহিকতা যে রয়েই গেছে। যেটা আমাদের জানার দরকার, যেসব প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে তার ব্যয় কতটা বাড়ানো হয়েছে।’
দেশের অর্থনীতি প্রায় তিন বছর যাবৎ সংকোচনের মধ্যে রয়েছে। ফলে সরকারও সংকোচননীতিতে রয়েছে।
সরকারের ব্যয় সংকোচননীতির কারণে দেশের উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও ধীরগতি রয়েছে। চলতি অর্থবছরের সর্বশেষ ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩৬.৬৫ শতাংশ। এক অর্থবছরে এত কম বাস্তবায়নের নজির আর দেখা যায়নি।
এডিপি কম বাস্তবায়নের কারণ হিসেবে ৬ মের বর্ধিত সভায় বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সদস্য (সচিব) মো. কামাল উদ্দিন বলেন, ‘যেসব প্রকল্পের মেয়াদ শুধু বিল পরিশোধের কারণে বাড়াতে হচ্ছে, সেসব প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধি না করে বিল পরিশোধ করার বিকল্প পদ্ধতি নির্ধারণ করা প্রয়োজন। প্রকল্পের মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রাজস্ব খাতেও ব্যয় বাড়ে। ফলে সামগ্রিকভাবে শুধু বিল পরিশোধের কারণে প্রকল্পের মোট বরাদ্দ বৃদ্ধি পায়। বিকল্প পদ্ধতিতে বিল পরিশোধ করা সম্ভব হলে প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বৃদ্ধি পাবে না।
এ সময় ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) এম এ আকমল হোসেন আজাদ বলেন, অনেক প্রকল্প আছে যা বছরের পর বছর মেয়াদ বৃদ্ধি করে চলমান রাখা হচ্ছে, যা দ্রুত শেষ করা প্রয়োজন।
এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদসচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদ বলেন, প্রকল্প পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা না থাকায় সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তিনি সভায় অবগত করেন, ক্রয়সংক্রান্ত কমিটির সভায় পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে প্রকল্প গ্রহণ, প্রকল্প পরিচালনাসংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা ও তার সমাধান কিভাবে করা যায়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ আয়োজন করাসংক্রান্ত আলোচনা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের পক্ষ থেকে এসংক্রান্ত প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে।
এদিকে নতুন অর্থবছরে এডিপির আকার দুই লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা কম। আগের অর্থবছরের এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এ অর্থবছরে বিদেশি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ১৫ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৮৫ হাজার কোটি টাকায় নামানো হয়েছে। নতুন এডিপিতে ৭৯টি প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মধ্যে।