ঢাকা
১৯শে মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সন্ধ্যা ৬:৩৯
logo
প্রকাশিত : মে ১৯, ২০২৫

৮৫ হাজার কোটি টাকা গায়েব

‘বড় হয়ে আমরা কেউ পুঁজিবাজারে যাব না। পুঁজিবাজারে গেলে মানুষ ফকির হয়’—চার সন্তানকে পড়ার টেবিলে এভাবেই প্রতিদিন শপথ করান মা আমিনা খাতুন। তাঁর স্বামী সাইফুল আলম পুঁজিবাজারে সব হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছেন আগেই। ধানমণ্ডির ব্যাংক এশিয়া সিকিউরিটিজের এই বিনিয়োগকারীর দিন কাটছে প্রচণ্ড গ্লানির মধ্যে।

পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতন, ফোর্সড সেলে সাইফুল আলমের মতো অনেক বিনিয়োগকারী নিঃস্ব হয়ে গেছেন। অন্যদিকে আবুল খায়ের হিরুর মতো মাস্টারমাইন্ডরা এখনো বহাল তবিয়তে কারসাজি করে যাচ্ছেন। পুঁজিবাজারের দরবেশ খ্যাত সালমান এফ রহমানের কারসাজির অন্যতম হোতা আবুল খায়ের হিরু। তাঁর কালো ছায়া থেকে বের হতে পারছে না পুঁজিবাজার।

পুঁজিবাজারের ৯০ শতাংশ বিনিয়োগকারী পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমআইএ)। সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত জরিপে দেখা গেছে, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ দায়িত্ব নেওয়ার পর বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা।

লোটাস কামাল-দরবেশ-শিবলী রুবাইয়াতের সিন্ডিকেট : স্বৈরাচারী শাসনামলে দেশের শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটে পরস্পরের সঙ্গী ছিলেন সালমান এফ রহমান, লোটাস কামাল, শিবলী রুবাইয়াত ও আবুল খায়ের হিরু। তথ্য বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে ২০১০ সালের পুঁজিবাজার কারসাজি সিএমসি কামালের শেয়ার কারসাজিতে জড়িত ছিলেন লোটাস কামাল।

তথ্য বলছে, নানা অভিযোগ থাকার পরও শেখ হাসিনা সরকারের আমলে কোনো ধরনের শাস্তির মুখে পড়তে হয়নি সালমান-লোটাস কামাল, শিবলী-হিরু জোটের কাউকে। এতে বেপরোয়া হয়ে ওঠে এই দুই জুটি।

শেয়ারবাজারে সর্বনাশের পেছনে রয়েছে দুই জুটির কারসাজি। সব নিয়ম-কানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চলে তাঁদের অবাধ লুটপাট। এই সিন্ডিকেটের কারসাজিতে নিঃস্ব হয়েছেন শেয়ারবাজারের লাখ লাখ বিনিয়োগকারী।

লোপাট করে নেওয়া হয়েছে তাঁদের পুঁজি। লাখ লাখ বিনিয়োগকারীকে পথে বসিয়ে গেছেন সালমান-লোটাস কামাল, শিবলী-হিরু গং।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনকালে যখনই শেয়ার কারসাজি ও জাল-জালিয়াতির কথা উঠেছে তখনই ঘুরেফিরে সামনে চলে এসেছে এসব নাম। তাঁরা বাজার কারসাজিতে সহায়তা করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ পদগুলোতে নিজেদের পছন্দের লোক বসিয়েছেন। এ চক্র একসঙ্গে মিলেমিশে শেয়ারবাজার থেকে লুণ্ঠন করে নিয়ে গেছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার কোটি টাকা।

দরবেশের মুরিদরা এখনো সক্রিয়

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) অনুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির সদস্য ইয়াওয়ার সাঈদ বলেন, “১৯৯৬ ও ২০১০ সালের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির তদন্তে অনেক কিছুই বেরিয়ে এসেছিল। কিন্তু তার আলোকে কিছুই করা হয়নি। কাউকে শাস্তি দেওয়া হয়নি; বরং সেই ‘দরবেশ, পীররা’ দাড়ি কামানোর আগ পর্যন্ত পুঁজিবাজার চালিয়েছেন। এখন পুঁজিবাজারে সেই দরবেশ-পীররা নেই। কিন্তু তাঁদের মুরিদরা রয়ে গেছেন।”

গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা ছিলেন তিনি। যুগের পর যুগ তাঁর নাম আর পুঁজিবাজারের কারসাজি সমার্থক হয়ে গেছে। দেশের ইতিহাসে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত হয়েও বিচার হয়নি। ১৯৯৬ সালের ভয়াবহ ধসের নেপথ্যে জুলাই থেকে ডিসেম্বরে জালিয়াতি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে অভিযুক্ত সালমান এফ রহমান ও তাঁর কম্পানি জড়িত ছিল বলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের তদন্তেও উঠে এসেছে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দীর্ঘদিন মন্দার কারণে বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী এখন বড় ধরনের লোকসানের মুখে। সালমানপন্থী একটি গ্রুপ বাজারে বিক্রির চাপ তৈরি করে পতন ত্বরান্বিত করে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, যাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা অস্থিরতার মধ্যে শেয়ার ছাড়েন।

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ডিএসইএক্স সূচকের অবস্থান ছিল ৫৪২৬ পয়েন্টে। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর বিনিয়োগকারীরা আশায় বুক বেঁধেছিলেন। সেই আশাবাদ থেকে গত বছরের ১১ আগস্ট সূচকটি বেড়ে ৬০১৬ পয়েন্টে দাঁড়ায়। তবে এর পর থেকেই আবার ছন্দঃপতন ঘটে পুঁজিবাজারে। সর্বশেষ গতকাল রবিবার ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৯.৩৮ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪৭৯১ পয়েন্টে। লেনদেনও তলানিতে ঠেকেছে। রবিবার লেনদেন হয়েছে মাত্র ২৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকার। অর্থাৎ ৯ মাসে সূচকটি ১২২৫ পয়েন্ট হারিয়েছে।

গত ৯ মাসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সার্বিক সূচক ডিএসইএক্স ১২২৫ পয়েন্ট হারিয়েছে। লেনদেনের পরিমাণ নেমে এসেছে ৩০০ কোটি টাকার ঘরে। সার্বিকভাবে বিনিয়োগকারীদের আস্থাহীনতার কারণে যত দিন যাচ্ছে পুঁজিবাজারের দরপতন আরো তীব্র হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

কে এই হিরু

আবুল খায়ের হিরু শেয়ারবাজারে আলোচিত এক সরকারি কর্মকর্তা, শেয়ার কারসাজি করে যিনি রাতারাতি বড় বিনিয়োগকারী বনে যান। সমবায় ক্যাডারের এই কর্মকর্তার আছে বাজারকে ইচ্ছামতো প্রভাবিত করার ক্ষমতা। তিনি যখন কোনো শেয়ার কেনেন, অন্য বিনিয়োগকারীরাও তাঁর পথ অনুসরণ করেন। কারণ তাঁরা জানেন এই শেয়ারে বিনিয়োগ নিশ্চিত লাভজনক।

সমবায় অধিদপ্তরের উপরেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরু তাঁর নিজ নামে খোলা একটি বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে শেয়ার লেনদেনের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজন, পরিবারের সদস্য ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নামে একাধিক বিও অ্যাকাউন্ট খোলেন এবং সেগুলো পরিচালনা করেন।

বিএসইসির কমিশনের এক এনফোর্সমেন্ট রিপোর্ট অনুযায়ী, শেয়ারদরে কারসাজিসংক্রান্ত প্রতিটি অভিযোগের শুনানিতে হিরু তাঁর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে ব্যক্তিগতভাবে বিবৃতি জমা দিতেন।

পুঁজিবাজারে সাবেক শিবলী কমিশনের সময়কালে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আসেন সমবায় অধিদপ্তরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আবুল খায়ের হিরু। ডজনের বেশি কম্পানির শেয়ার নিয়ে কারসাজি করার দায়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ২০২২ সাল থেকে বিভিন্ন সময়ে আবুল খায়ের হিরু ও তাঁর সহযোগীদের জরিমানা করেছিল। নির্ধারিত সময়ে জরিমানার টাকা পরিশোধ না করায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি হিরু ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে চারটি মামলা করেছে।

বিএসইসির এনফোর্সমেন্ট প্রতিবেদন অনুযায়ী, হিরু ও তাঁর সহযোগীরা গ্রিন ডেল্টা ইনস্যুরেন্স, ঢাকা ইনস্যুরেন্স, এশিয়া ইনস্যুরেন্স, ফরচুন সুজ, ওয়ান ব্যাংক, এনআরবিসি ব্যাংক, বিডিকম অনলাইন, আইপিডিসি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইনস্যুরেন্স, জেনেক্স ইনফোসিস, প্যারামাউন্ট ইনস্যুরেন্সসহ আরো কিছু কম্পানির শেয়ার কারসাজিতে জড়িত ছিলেন।

জানতে চাইলে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পুঁজিবাজারে আস্থাহীনতা চলছে, এতে প্রায়ই দরপতন হচ্ছে। এতে বাজার মূলধন কমে গেছে। মন্দা বাজারেও কারসাজি থেমে নেই। কারা কারসাজি করছে তা বিএসইসি ভালো জানে। তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে সন্দেহ হতে পারে—নিয়ন্ত্রক সংস্থার কেউ কেউ এই কারসাজির সঙ্গে জড়িত।’

অভিনব উপায়ে কারসাজি

সর্বশেষ গত ১৫ মে পুঁজিবাজার কারসাজির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আবুল খায়ের হিরু, তাঁর ব্যাবসায়িক পার্টনার জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসানসহ ১৩ জনের সিন্ডিকেটকে ২৯ কোটি টাকা জরিমানা করেছে বিএসইসি। এর মধ্যে সাকিব আল হাসানকে দুই কোটি ২৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বিএসইসির এপ্রিল মাসের ‘এনফোর্সমেন্ট অ্যাকশন রিপোর্ট’ অনুযায়ী, জরিমানার সম্মুখীন হওয়া অন্যরা হলেন : আবুল খায়ের হিরু, কাজী সাদিয়া হাসান, আবুল কালাম মাতব্বর, ডিআইটি কো-অপারেটিভ, কাজী ফরিদ হাসান, কাজী ফুয়াদ হাসান, কনিকা আফরোজ, সাজেদ মাতব্বর, মোহাম্মদ বাশার, মোনার্ক হোল্ডিংস, মোনার্ক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস, সফটাভিয়ন এবং জাভেদ এ মতিন।

বিএসইসির এসংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই চক্রটি সোনালি পেপারের শেয়ার কৃত্রিমভাবে বাড়িয়ে তুললে শেয়ার মূল্য ১২৬ শতাংশ বেড়ে ৯৫৭.৭০ টাকায় পৌঁছে যায়। এতে তারা ৩৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকা মুনাফা তোলে এবং আরো ৫৫ কোটি টাকার অবাস্তবায়িত লাভের সম্ভাবনা তৈরি হয়।’

বিএসইসির তদন্তে উঠে এসেছে, একাধিক ব্যক্তি সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে একটি সিন্ডিকেট গঠন করে শেয়ারের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়িয়েছেন। কমিশনে দেওয়া এক লিখিত বক্তব্যে আবুল খায়ের হিরু সাকিবের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। এটি ইচ্ছাকৃত ছিল না; বরং অজ্ঞতার কারণে হয়েছে। আমি প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, ভবিষ্যতে শেয়ার লেনদেনের ক্ষেত্রে আমি আরো সতর্ক থাকব।’

এর আগে গত বছরের ৬ ডিসেম্বর কারসাজিকারক আবুল খায়ের হিরু, তাঁর পরিবারের সদস্য ও সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠানকে শেয়ার কারসাজির দায়ে ১৩৫ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এর মধ্যে এককভাবে সর্বোচ্চ ৩৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতব্বরকে। হিরুকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তৃতীয় সর্বোচ্চ ২৭ কোটি টাকা জরিমানা করা হয় তাঁর স্ত্রী কাজী সাদিয়া হাসানকে। এরপর হিরুর বোন কণিকা আফরোজকে প্রায় ২২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।

অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) তদন্তেও শেয়ারবাজারে কারসাজি এবং অর্থ আত্মসাতে আবুল খায়ের হিরু, তাঁর প্রতিষ্ঠান ডিআইটি কো-অপারেটিভ, হিরুর বাবা আবুল কালাম মাতব্বর, আলোচিত কারসাজিকারক আব্দুল কাইয়ুম, হিরুর প্রতিষ্ঠান মোনার্ক হোল্ডিংস, ক্রিকেটার ও সাবেক সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসান, যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যবসায়ী জাবেদ এ মতিন, সালমান এফ রহমান, বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, সাবেক কমিশনার শেখ শামসুদ্দীন আহমেদসহ আরো কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, গত চার বছরে বিএসইসিতে ১৮৪টি তদন্ত রিপোর্ট পাঠিয়েছে ডিএসই। কিন্তু আবুল খায়ের হিরুকে কয়েকটি কারসাজির মাধ্যমে নামমাত্র জরিমানা করে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম অবৈধভাবে বিপুল অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন। এ ছাড়া অনৈতিকভাবে বিপুল সুবিধা নিয়ে একক সিদ্ধান্তে আলিফ ইন্ডাস্ট্রিজের ৩০০ কোটি টাকার রূপান্তরযোগ্য বন্ড অনুমোদন দেন শিবলী, যা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের ইতিহাসে বিরল।

এসব বিষয়ে আবুল খায়ের হিরুর বক্তব্য চেয়ে একাধিকবার ফোন করে পাওয়া যায়নি।

কারসাজি রোধে তৎপর হওয়ার সঙ্গে অতীতের এসব অনিয়মের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে বিএসইসি। অতীতে বিভিন্ন সময় কারসাজির দায়ে গত পাঁচ মাসে প্রায় ৬১৯ কোটি টাকা জরিমানা করে বিএসইসি। তবে এখনো এক টাকাও আদায় হয়নি।

বিএসইসি জানিয়েছে, আইন অনুযায়ী জরিমানার আদেশ জারি হওয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ৯০ দিনের মধ্যে রিভিশনের সুযোগ থাকে। যদি রিভিউতে জরিমানা বহাল থাকে, তাহলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হাইকোর্টে রিট করতে পারেন।

হিরুসহ জরিমানা আদায় ও ব্যবস্থা গ্রহণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএসইসির পরিচালক ও মুখপাত্র মো. আবুল কালাম বলেন, ‘কমিশন আগের জরিমানা বহাল রাখলে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হাইকোর্টে রিট করতে পারেন। এটি তাঁদের মৌলিক অধিকার। তবে জরিমানার টাকা যদি আদায় না হয়, তাহলে তাঁদের বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট কেস করা হবে। কারসাজির বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে ব্যবস্থা নিচ্ছে কমিশন। যারা কারসাজি করছে তাদের সবার বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

বাংলাদেশ ক্যাপিটাল মার্কেট ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এস এম ইকবাল হোসেন বলেন, ‘পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা জীবন্ত লাশ হয়ে আছেন। বিএসইসি চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বে বাজার থেকে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা মূলধন উধাও হয়েছে। পুঁজি হারিয়ে অনেক বিনিয়োগকারী চরম হতাশায় পড়েছেন, কেউ কেউ আত্মহননের পথও বেছে নিচ্ছেন। বিএসইসি চেয়ারম্যান পুঁজিবাজার বোঝেন না, তাঁর নেতৃত্বে বাজারে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।’

এদিকে পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণসহ পাঁচটি নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। অন্য নির্দেশনাগুলো হচ্ছে—সরকারের মালিকানা রয়েছে এমন মাল্টিন্যাশনাল কম্পানিগুলোকে সরকারের শেয়ার কমিয়ে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া; বেসরকারি খাতের দেশীয় বড় কম্পানিগুলোকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করতে প্রণোদনাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া; স্বার্থানেন্বষী মহলের কারসাজি রুখতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এসে তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজার সংস্কার করা এবং বড় ধরনের ঋণ প্রয়োজন এমন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যাংকঋণনির্ভরতা কমিয়ে পুঁজিবাজার থেকে বন্ড ও ইকুইটির মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহে আগ্রহী করে তোলার ব্যবস্থা নেওয়া।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram