ঢাকা
৪ঠা মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৮:১৭
logo
প্রকাশিত : মে ৪, ২০২৫

চুপিচুপি চাষ হচ্ছে ‌‘পিরানহা’, ‘রূপচাঁদা’ বলে দেদারসে বিক্রি

ঘটনা-১
আব্দুল মজিদ মিয়া কারওয়ান বাজারে রাস্তার পাশে হেঁটে যাওয়ার সময় খেয়াল করেন পাশেই ডালায় মাছ সাজিয়ে বিক্রি করছেন একজন মাছ বিক্রেতা। মাছগুলো অনেকটা রূপচাঁদার মতো দেখতে হওয়ায় মজিদ মিয়া আগ্রহ নিয়ে বিক্রেতার কাছে জানতে চান মাছের নাম। বিক্রেতা এটাকে রূপচাঁদা মাছ বলায় তিনি দামাদামি করে ১৭০ টাকা কেজি দরে দেড় কেজি মাছ কিনে নিয়ে যান। বাসায় গিয়ে মাছ কাটার সময় মাছের মুখে বড় বড় দাঁত দেখতে পেয়ে তিনি বুঝতে পারেন এটা রূপচাঁদা নয়। তবে বিষয়টি জানতে পরদিন সেই জায়গায় গিয়েও ওই ভ্রাম্যমাণ মাছ বিক্রেতাকে আর খুঁজে পাননি তিনি।

ঘটনা-২
স্কুল শেষে সন্তানকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ভাটারার নতুনবাজারে রাস্তার পাশে রূপচাঁদার মতো মাছ বিক্রি করতে দেখে এগিয়ে যান আফসানা বেগম। দামাদামি করে দেড়শ’ টাকা দরে এক কেজি মাছ কিনে নিয়ে যান। বাসায় গিয়ে মাছটি কাটার সময় বুঝতে পারেন তিনি ঠকেছেন। এটি আসলে রূপচাঁদা নয়। পরে প্রতিবেশীদের কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারেন তিনি রাক্ষুসে মাছ ‘পিরানহা’ কিনে এনেছেন।

শুধু ঢাকা নয় দেশের বিভিন্ন স্থানে এখন এভাবে দেদারসে বিক্রি হচ্ছে নিষিদ্ধ পিরানহা মাছ। জানা গেছে, নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও একাধিক জেলায় গোপনে এই মাছ চাষ ও বাজারজাত করা হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তর ২০০৮ সালে ‘পিরানহা মাছ’ আমদানি, চাষ, সংরক্ষণ ও বিপণন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করে। তবুও দেশের বিভিন্ন জেলার গোপন খামারে এখনো এই মাছ চাষের প্রমাণ মিলছে। বিশেষ করে খুলনা, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, গাইবান্ধা, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লার কিছু এলাকায় ‘রেড বেলি পিরানহা’ নামে পরিচিত এ মাছ রূপচাঁদা বা পাকা পিরানহা নাম দিয়ে বাজারে বিক্রি হচ্ছে। স্থান ভেদে বাজারে প্রতি কেজি পিরানহা ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়।

বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনের তথ্য ও গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাংলাদেশে চাষ হওয়া পিরানহা গোত্রের মাছটি মূলত পাকু। রেড বেলিড পাকু নামেও মাছটি পরিচিত। বাজারে অনেক সময় এটি বিক্রি হয় ‘রূপচাঁদা’, ‘পাকা পিরানহা’, এমনকি ‘সুন্দরী মাছ’ নামে। গায়ে লালচে রং থাকায় অনেক জায়গায় মাছটিকে ডাকা হয় ‘লাল চান্দা’ নামে।

মৎস্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেকেই মাছের নাম পরিবর্তন করে বিক্রি করছে। সাধারণ মানুষ জানে না তারা কী খাচ্ছে।

পিরানহা মাছ দ্রুত বংশবিস্তারে সক্ষম এবং জলাশয়ে প্রবেশ করলে স্থানীয় প্রজাতির ওপর আক্রমণ চালিয়ে খাদ্যচক্রে ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মাছ এক ধরনের জলজ আগ্রাসন। এগুলো খোলা জলাশয়ে ছড়িয়ে পড়লে অনেক দেশি মাছ যেমন পুঁটি, শিং, টেংরা বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে। পরিবেশের ওপর এর প্রভাব ভয়াবহ।

পিরানহা নিষিদ্ধ করার আগে দুই মাস গবেষণা করেছিল বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই)। তবে পাকু নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি বলে জানিয়েছেন বিএফআরআইয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডুরিন আখতার জাহান।

মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক (মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ শাখা) বরুণ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, পিরানহার যত প্রজাতি আছে, সব কটির বাজারজাত, চাষ ও পরিবহন মৎস্য সংরক্ষণ আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এখন এই প্রজাতির মাছের বেচাকেনা অনেক কমে এসেছে। তবে সস্তা হওয়ায় দেশে এই প্রজাতির মাছ চাষের একটা প্রবণতা তৈরি হয়েছিল। মৎস্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অভিযানে তা কমে এসেছে।

রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় মাছের আড়তের এক বিক্রেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই মাছ আগে ভালো বিক্রি করেছি। ভালো ইনকাম হইতো। পুলিশ আইসা ঝামেলা লাগায় দেইখ্যা এহন আর বিক্রি করি না।

গবেষণাপত্র থেকে জানা গেছে, পিরানহার বৈজ্ঞানিক নাম ‘অস্টারিওপিস’। পাকুর ‘কলোসোমা ব্রাখিয়াপোমাম’। পিরানহা গোত্রে প্রায় ১ হাজার প্রজাতির মাছ আছে। পাকু পুরোপুরি পিরানহা না হলেও পিরানহা পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। তবে এটিকে পিরানহা বলে অনেকে ভুল করেন। পিরানহা রাক্ষুসে স্বভাবের মাছ। মাংসাশী পিরানহার একটি ঝাঁক মিনিটের মধ্যে বড় কোনো প্রাণীকে কঙ্কালে পরিণত করতে পারে। অন্যদিকে, পাকু মাছ ছোট জলজ উদ্ভিদ ও পোকামাকড় খেয়ে বাঁচে।

পেটস অন মম ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, পাকু মাছ এককভাবে চলে, নিজের এলাকা নিজেই রক্ষা করে। আর পিরানহা চলে ঝাঁক বেঁধে। জন্মের পর পাকু আর তার পোনারা আলাদা হয়ে যায়। কিন্তু পিরানহা ঝাঁক বেঁধে ডিম রক্ষা করে। জন্মের পর পোনা পিরানহারা ঝাঁকের সঙ্গে যোগ দেয়।

একেকটি পাকু মাছ ৩০ ইঞ্চির মতো লম্বা হতে পারে। সর্বোচ্চ ওজন হতে পারে ৫০ পাউন্ডের বেশি। পিরানহা ১৭ ইঞ্চির মতো বাড়ে। ওজন হতে পারে সর্বোচ্চ সাড়ে সাত পাউন্ডের মতো। পাকু মাছের দাঁত দেখতে চারকোনা ও চ্যাপটা। অন্যদিকে পিরানহার দাঁত তিনকোনা, বেশ তীক্ষ্ণ।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram