ঢাকার নবাবগঞ্জে অবস্থিত খেলারামের বিখ্যাত বিগ্রহ মন্দির। স্থাপত্য সৌন্দর্যে ঘেরা ইতিহাসের নিরব সাক্ষী এ মন্দিরটি। চোখ জুড়িয়ে যায় এর নির্মাণশৈলী দেখে।
প্রাচীন এই মন্দিরের কোথাও প্রতিষ্ঠার তারিখ লেখা নেই। প্রত্নতত্ত্ব বিশেষজ্ঞদের মতে স্থাপনাটি উনিশ শতকের শেষদিকে অথবা বিশ শতকের শুরুর দিকে নির্মিত হয়েছিল। খেলারামের এই মন্দিরটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা বলে দাবি স্থানীয়দের।
এই মন্দিরের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় বাবুল বলেন, আমরা বয়োজেষ্ঠ্য ব্যক্তিদের মুখে শুনেছি, খেলারাম ধনীদের ঘরে ডাকাতি করে গরিবদের দান করতেন। একরাতে এই তিনতলা বিশিষ্ট বিশাল বিগ্রহ মন্দিরটি মাটি থেকে উপরে উঠে এসেছে। এ বাড়ি থেকে একটি সুড়ঙ্গ পথ ছিলো ইছামতির পাড়ে। নদীপথে ধন-সম্পদ নিয়ে আসতো খেলারাম দাতা। তার বাড়ির পাশেই ছিলো বিশাল পুকুর। মাকে বাঁচাতে খেলারাম দাতা এই পুকুরে নেমেছিলেন। এরপর আর কখনোই উঠে আসেননি তিনি।
বেশ কয়েকটি গম্বুজ বিশিষ্ট মন্দিরের ভেতরের পরিবেশ খুবই সুন্দর। কলেজ শিক্ষার্থী, তরুণ-তরুণীসহ বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ আসেন মন্দিরটি দেখতে।
কথা হয় সাভার থেকে আসা গৃহবধূ রানু ও হামিদার সাথে। তারা বলেন, ঢাকার খুব কাছে এমন সুন্দর জায়গা আর নেই। প্রতি বছর আমরা ঘুরতে আসি ছেলে-মেয়ে নিয়ে। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কলাকোপা-বান্দুরা এলাকায় প্রাকৃতিক দৃশ্যের চোখ জুড়ানো নদী ইছামতি।
এছাড়াও রয়েছে প্রাচীন জমিদারদের বসত বাড়ি। প্রায় ২০০ বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ গ্রাম কলাকোপা-বান্দুরার এই অঞ্চল একসময় ব্যবসা-বাণিজ্যের তীর্থস্থান ছিলো। কোকিলপেয়ারী জমিদার বাড়ির পাশে উকিল বাড়ি তারপর জমিদার ব্রজেন সাহার ব্রজ নিকেতন (যা এখন জজ বাড়ি), ব্যবসায়ী রাধানাথ সাহার বাড়ি (বর্তমানে আদনান প্যালেস পার্ক), শ্রীযুক্ত বাবু লোকনাথ সাহার বাড়ি (যার খ্যাতি মঠবাড়ি বা তেলিবাড়ি নামে), মধুবাবুর পাইন্না বাড়ি, পোদ্দার বাড়ি এবং কালি বাড়ি। এর বাইরে অনেক পুরানো ভবন ও মঠ চোখে পড়ে কলাকোপা-বান্দুরায়।
রাজধানী ঢাকার গুলিস্তান গোলাপ শাহ (রঃ) এর মাজার এলাকা থেকে বাসে বড়জোর দুই ঘণ্টার পথ ঢাকার নবাবগঞ্জ। উপজেলা সদর বাসস্ট্যান্ড থেকে দোহারের পথে যেতে একটু এগোলেই কলাকোপা ইউনিয়ন। কলাকোপা থেকে ছোট্ট একটি রাস্তা চলে গেছে বান্দুরার দিকে। সেই পথেই পড়বে খেলারাম দাতার মন্দির।