

জাহিদুল জাহিদ, বিজনেস করেসপন্ডেন্ট: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা ও আখাউড়া জুড়ে সোমবার এক নজিরবিহীন বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী প্রতীকী জানাজার কাফন পরে রাস্তায় নেমে আসেন। তাদের মূল দাবি—ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনে আলহাজ্ব কবীর আহমেদ ভূঁইয়াকে বিএনপির একক মনোনয়ন প্রদান।
এই গণসমাবেশের আয়োজক ছিলেন কসবা উপজেলা ও পৌর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দল, শ্রমিক দল, ওলামা দল, তাঁতী দল এবং জাসাস। কসবা পৌরসভার দশটি ইউনিয়ন ও নয়টি ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচি এলাকাবাসীর মতে, কসবায় ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক সমাবেশ।
নেতৃত্ব ও বক্তব্য
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন কসবা উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন আহমেদ খান, উপজেলা সাধারণ সম্পাদক শরিফুল হক স্বপন, পৌরসভা বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরীফ, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আইয়ুম খানসহ ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মী।
বক্তারা বিএনপির প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় ৯৩ বছর বয়সী মুশফিকুর রহমানের নাম অন্তর্ভুক্তির তীব্র সমালোচনা করেন। তারা অভিযোগ করেন—

“দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত ও নিষ্ক্রিয় একজন ব্যক্তিকে তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা তৃণমূলের আকাঙ্ক্ষার প্রতি অবজ্ঞা।”
বক্তাদের দাবি, মুশফিকুর রহমান গত ১৭ বছর ধরে এলাকাবিহীন, দলের কার্যক্রমে নিষ্ক্রিয় এবং বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িত। বক্তারা আরও অভিযোগ করেন, তিনি অতীতে দেশ টিভি আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর কাছে বিক্রি করে দেন, এবং তার প্রাক্তন সচিব মোহাম্মদ আরিফ বর্তমানে ২৫০ কোটি টাকার দুর্নীতির মামলায় কারাগারে বন্দী।
তাদের বক্তব্যে আরও ওঠে আসে, মুশফিকুর রহমান “১০ শতাংশ কমিশন বাণিজ্য”র সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং বর্তমানে শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়ায় নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেওয়ার সক্ষমতা নেই।
আওয়ামী প্রভাবের অভিযোগ
স্থানীয় বিএনপি নেতারা দাবি করেন, মুশফিকুর রহমানের ঘনিষ্ঠ মহল আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে আঁতাত করে চলছে। তাদের অভিযোগ—এই মহলের কয়েকজনের বিরুদ্ধে মাদক পাচার, অবৈধ জমি দখল ও প্রভাবশালী সরকারি ব্যক্তিদের সঙ্গে সন্দেহজনক ব্যবসায়িক লেনদেনসহ একাধিক অভিযোগ রয়েছে।
একজন বক্তা বলেন,
“এই চক্র নিজেদের স্বার্থ রক্ষা ও অপকর্ম ঢাকতে একজন অক্ষম প্রার্থীকে ব্যবহার করতে চায়।”
তৃণমূলের পছন্দ: কবীর আহমেদ ভূঁইয়া
অন্যদিকে সমাবেশে তৃণমূল নেতাকর্মীরা আবেগঘন কণ্ঠে বলেন—
“বিএনপির সবচেয়ে কঠিন সময়ে কবীর আহমেদ ভূঁইয়া কর্মীদের পাশে ছিলেন, কারাবন্দীদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং মানবিক সেবায় অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন।”
ভূঁইয়া গ্লোবাল ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে তিনি বন্যা, দুর্যোগ ও কোভিড-১৯ সময়ে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন, অসহায় পরিবারে পোশাক বিতরণ, মাদকবিরোধী ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন এবং ৩১ দফা জাতীয় সংস্কার এজেন্ডা তৃণমূলে পৌঁছে দিতে কাজ করেছেন।
বক্তারা একক কণ্ঠে ঘোষণা দেন—
“কবীর আহমেদ ভূঁইয়া ছাড়া আমরা কাউকে গ্রহণ করব না। তিনিই তৃণমূলের প্রকৃত প্রতিনিধি ও বিজয়ের নিশ্চয়তা।”

আখাউড়ায় ক্ষোভ ও প্রতিবাদ
আখাউড়ার সাধারণ জনগণও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“আমরা ১৭ বছর ধরে আওয়ামী লীগ নেতা ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নিপীড়নের শিকার।”
তাদের দাবি, অতীতে মুশফিকুর রহমান তিন দফায় প্রার্থী হলেও একবার হেরে যান, একবার প্রার্থীতা বাতিল হয় এবং একবার ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সমঝোতায় প্রার্থীতা থেকে সরে দাঁড়ান।
আখাউড়া ও কসবাবাসীর মতে, “এলাকায় পরিবর্তনের একমাত্র ভরসা হলেন কবীর আহমেদ ভূঁইয়া।”
তৃণমূলের আলটিমেটাম
স্থানীয় বিএনপি নেতারা স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন—
“দলীয় নেতৃত্ব যদি মনোনয়ন পুনর্বিবেচনা না করে, তাহলে কসবা ও আখাউড়া জুড়ে আরও কঠোর আন্দোলন শুরু হবে।”
প্রার্থী তালিকায় মুশফিকুর রহমানের নাম অন্তর্ভুক্তির পর থেকেই দুই উপজেলায় তীব্র প্রতিবাদ, বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে।
বক্তারা একবাক্যে ঘোষণা করেন—
“ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত করতে একমাত্র যোগ্য, নিবেদিত ও তৃণমূলের প্রার্থী হলেন আলহাজ্ব কবীর আহমেদ ভূঁইয়া।”

