ঢাকা
১২ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ১০:০৯
logo
প্রকাশিত : অক্টোবর ৯, ২০২৫

ওমানে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৭ জনের বাড়িই সন্দ্বীপে

ওমানের ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত আট প্রবাসীর মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের সারিকাইতসহ পুরো সন্দ্বীপজুড়ে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। নিহত আটজনের মধ্যে সাতজনের বাড়িই সন্দ্বীপে। তাদের মধ্যে পাঁচজনের বাড়ি সারিকাইত ইউনিয়নে।

নিহত সন্দ্বীপের সাত প্রবাসীর অপর দুজনের মধ্যে একজনের বাড়ি মাইটভাঙ্গায়, অপরজনের সন্দ্বীপ পৌরসভার রহমতপুরে।

এ ছাড়া দুর্ঘটনায় নিহত অন্য প্রবাসী আলাউদ্দিন রাউজান উপজেলার চিকদার ইউনিয়নের ইউসুফের ছেলে বলে জানা গেছে। এ দুর্ঘটনায় একমাত্র বেঁচে যাওয়া গাড়িচালক ওমান দুখুম হাসপাতালে চিকিৎসারত রয়েছেন।

গাড়িচালক ছগির ভিডিওকলে আটজনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘সিদরা থেকে সাগরমুখী একটি মাছ পরিবহনের বড় গাড়ি বেপরোয়া গতিতে ধাক্কা দিলে তাদের গাড়িটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

জানা যায়, সারিকাইত ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা দুর্ঘটনায় নিহত প্রবাসী শাহাবুদ্দীন, বাবলু ও রকি। তিনজনের বাড়ি পাশাপাশি। একই সমাজে বসবাস ছিল তাদের। তাদের হারানোর বেদনায় স্বজনদের কান্নার রোল এলাকার আকাশ ভারী করে তুলেছে।

দেড় বছর আগে বিয়ে করা শাহাবুদ্দীনের ৪ মাসের ফুটফুটে বাচ্চা আছিয়া বাবা ডাকার আগেই এতিম হয়ে গেল। আছিয়াকে কোলে নিয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন তার দাদা ছিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘মাত্র ২১ দিন আগে ছুটি শেষ করে ওমানে যায় আমার ছেলে শাহাবুদ্দীন। ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছি সংসারের সুখের জন্য, আর আজ সে চলে গিয়ে সংসার শূন্য করে দিল।’

শাহাবুদ্দীনের পাশেই বাবলুর ঘর।

তার দুই সন্তানের বয়স চার বছরের নিচে। বুঝজ্ঞান হওয়ার আগেই বাবাকে হারিয়ে ফেলল তারা। রকির একমাত্র ছেলের বয়স ৫ মাস। প্রতিদিন ভিডিওকল করে ছেলেকে দেখে পিতৃত্বের স্বাদ মেটানোর চেষ্টা করতেন তিনি। মারা যাওয়ার আগের দিনও কল করেছিলেন। অবুঝ সন্তানটি মোবাইল দেখলে সব সময় বাবার ছবি খোঁজার চেষ্টা করে— এ কথা বলে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন রকির স্ত্রী।

সন্দ্বীপ পৌরসভার রহমতপুরের রনির পরিবারে চলছে শোকের মাতম। তিন বছর আগে একসঙ্গে পুকুরে ডুবে মারা যায় তার দুই ভাইয়ের দুই সন্তান, গত বছর লিভার ক্যান্সারে হারিয়েছেন আরেক ভাইয়ের এক সন্তানকে। আজ বুধবার দেড় বছরের একমাত্র সন্তান ও স্ত্রীকে রেখে চলে গেলেন রনিও।

মাইটভাঙ্গা ৬ নম্বর ওয়ার্ডের নিহত প্রবাসী জুয়েল ওমানে আছেন ছয় বছর ধরে। ৬-৭ মাস আগে ছুটিতে বাড়ি এসে পাকা ঘর নির্মাণের কাজে হাত দিয়েছিলেন; কিন্তু শেষ করে যেতে পারেননি।

জুয়েলের বাবা জামাল বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে তার প্রেরিত টাকা দিয়ে বিল্ডিংয়ের ছাদের কাজ শুরু করার কথা, ঘর তো হবে; কিন্তু সে ঘরে থাকবে কে? আপনাদের মাধ্যমে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কাছে আমার জোর দাবি, দ্রুত আমার ছেলের মরদেহটা যেন দেশে পাঠানো হয়। তার তৈরি ভবনের সামনেই তার জানাযাটা করতে চাই।’

সারিকাইত ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তাসলিমা বেগম জানান, প্রবাসে একসঙ্গে এত জনের অকালমৃত্যুর ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

ওমানে কর্মরত স্থানীয় প্রবাসী মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্ঘটনায় নিহতদের মরদেহ দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। দূতাবাস কর্মকর্তারা এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার ব্যাপারে আশ্বস্ত করেছেন।’

সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মংচিংনু মারমা জানান, নিহতদের দাফন-কাফনের বিষয়ে সরকারিভাবে যা যা সহযোগিতা দরকার তা করা হবে।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির নেতা প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন, বিএনপির উপজেলা আহবায়ক অ্যাডভোকেট আবু তাহের ও জামায়াত নেতা আলাউদ্দীন সিকদার নিহত রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের আত্মার মাগফেরাত কামনাসহ শোকসন্তপ্ত পরিবাবের প্রতি সরকারি সহযোগিতার পাশাপাশি বিত্তবানদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।

logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram