ঢাকা
১৫ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
ভোর ৫:৪২
logo
প্রকাশিত : অক্টোবর ৮, ২০২৫

‘লাল চন্দন’ ভেবে বিক্রি হচ্ছে নদীতে ভেসে আসা গাছের গুঁড়ি

উজানের ঢল ও ভারী বর্ষণে কুড়িগ্রামের নদনদীর পানি বেড়েছিল কয়েকদিন ধরে। নদীর স্রোতে কয়েকদিন ধরে ভারতের ভেতর থেকে ভেসে আসছে হাজার হাজার গাছের গুঁড়ি। এর মধ্যে বাকল ও শিকড় ছাড়া লালচে রঙের কিছু গুঁড়ি চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ‘লাল চন্দন’ হিসেবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত রবিবার (৫ অক্টোবর) ভোর থেকেই কালজানি নদী হয়ে দুধকুমার নদীতে এসব গাছ ভেসে আসতে শুরু করে।

এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা ভোর থেকেই নৌকা ও বাঁশের ভেলায় নেমে পড়েন গাছ সংগ্রহের প্রতিযোগিতায়। কেউ সাঁতরে, কেউ বাঁশের ভেলা বানিয়ে কাঠগুলো নদীর স্রোত থেকে ধরে তীরে তুলতে শুরু করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একেকটি গাছের গুঁড়ি ২০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও দাম আরো চড়া।

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নে একটি বড় লালচে গাছের গুঁড়ি লাল চন্দন মনে করে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাম চাওয়া হয়েছে। রায়গঞ্জের দামাল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মোতালেব বলেন, চারজন মিলে ৫০ ফুটের মতো একটা লাল গাছ তুলেছি। এটা দেখতে একদম চন্দন কাঠের মতো। আমরা দাম চেয়েছি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, তবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা হলে বিক্রি করে দেব।

এদিকে অনেকে এই কাঠের গুঁড়িগুলো জ্বালানি হিসেবেও কিনছেন। কালজানি নদীর পাড়ের বাসিন্দা আজাদ হোসেন বলেন, একেকটা গাছের গুঁড়ি ১২ হাজার টাকায় কিনেছি। এগুলো কেটে জ্বালানি কাঠ হিসেবে বিক্রি করব।

ছিটমাইলানী গ্রামের সবুজ মিয়া বলেন, রবিবার রাত থেকে পরিবার নিয়ে প্রায় ৫০০ মণ কাঠ তুলেছি। কিছু রাখব রান্নার জ্বালানি হিসেবে, বাকিটা বিক্রি করব।

ভালো দামে বিক্রি হচ্ছে। ভুটান হয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কোচবিহার জেলার হাসিমারা বনাঞ্চল দিয়ে কালজানি নদী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বৃষ্টির পানিতে ওইসব বনাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় সেখান থেকে গাছের গুঁড়িগুলো ভেসে আসছে বলে ধারণা করছে বন বিভাগ।

জেলা বন বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান বলেন, আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে কাঠগুলো দেখেছি। এগুলো দীর্ঘদিন পানিতে থাকার কারণে রঙ পরিবর্তিত হয়ে লালচে হয়েছে। প্রকৃত চন্দন কাঠ নয়। শ্বেত বা রক্ত চন্দনের কোনো নমুনাই এসব কাঠে পাওয়া যায়নি। বেশিরভাগই পচা কাঠ।

তিনি আরো বলেন, সম্ভবত বনাঞ্চল পরিষ্কার করতে ভারতে নদীতে ফেলে দেওয়া কাঠগুলো স্রোতের টানে কুড়িগ্রামের দিকে ভেসে এসেছে। মানুষ না বুঝেই এগুলো চন্দন ভেবে কিনছে।

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ও উদ্ভিদবিদ মির্জা নাসির উদ্দিন বলেন, প্রায় সব কাঠেই ট্যানিন ও ফেনলিক যৌগ থাকে। কাঠ দীর্ঘদিন পানিতে ভেজা থাকলে এই যৌগগুলো পানিতে দ্রবীভূত হয়ে বাতাসের অক্সিজেনের সংস্পর্শে এসে জারণের মাধ্যমে লালচে বা বাদামি রঙ তৈরি করে। এ কারণে সাধারণ কাঠও চন্দন কাঠের মতো রঙ ধারণ করে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এগুলোর সঙ্গে চন্দনের কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি আরো বলেন, চন্দন কাঠের বিশেষ গন্ধ থাকে, যা শুকনো কাঠ কেটে ঘষলে বোঝা যায়। কিন্তু এসব কাঠে কোনো ধরনের গন্ধ বা তেলীয় উপাদান নেই যা প্রমাণ করে এগুলো সাধারণ গাছের কাঠ।

এদিকে নদী থেকে গাছ সংগ্রহ করতে গিয়ে নাগেশ্বরীর বেরুবাড়ী ইউনিয়নের খেলারভিটা এলাকায় পানিয়ে ডুবে গেছেন মনছুর আলী (৪০) নামে এক ব্যক্তি। দীর্ঘ সময় অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করা যায়নি। এ বিষয়ে নাগেশ্বরী ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মাসুদুর রহমান বলেন, নদীতে স্রোত ছিল খুব তীব্র। সোমবার বিকেল পর্যন্ত খোঁজ চালিয়েছি। কিন্তু তাকে পাওয়া যায়নি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে উদ্ধার অভিযান সমাপ্ত করেছি। মনছুর আলী খামার নকুলা গ্রামের বাসিন্দা।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram