ঢাকা
২৭শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ১০:০২
logo
প্রকাশিত : মার্চ ১৭, ২০২৫

এক বিচারকের কাঁধে ১৫০০ মামলা

দেশের ১০১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে ঝুলে আছে দেড় লাখের বেশি মামলা। সে হিসাবে বিচারের জন্য গড়ে এসব বিচারকের কাঁধে মামলা রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৫০০টি করে। একই সঙ্গে শিশু আদালতের ৪২ হাজার এবং মানব পাচার ট্রাইব্যুনালের ৫ হাজারের বেশি মামলাও সামলাচ্ছেন এই বিচারকরা।

বিচারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির দাবি উঠছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিচার দ্রুত করতে আইন সংশোধনের কথাও বলা হচ্ছে। তবে শুধু আইন সংশোধন করেই দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন এসব ট্রাইব্যুনাল থেকে অন্য মামলার চাপ কমানো। একই সঙ্গে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি বিচারকদের লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়ানোও জরুরি।

আইনজ্ঞরা বলছেন, ফৌজদারি মামলার ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি নীতি হচ্ছে, কোনো অপরাধী পার পেয়ে গেলেও কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে সাজা দেওয়া যাবে না। তাই সাত দিনে বিচার শেষ করতে হবে এটা একটি ভ্রান্ত ধারণা। সত্যিকারার্থে বিচারের দীর্ঘসূত্রতা কমাতে গোড়ায় হাত দেওয়ার পরামর্শ তাদের।

সুপ্রিম কোর্টের বিবরণী শাখার গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী, নারী ও শিশু নির্যাতনের ১ লাখ ৫১ হাজার ৩১৭টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এর মধ্যে অনুসন্ধান ও তদন্ত পর্যায়ে রয়েছে ২০ হাজার ১৮৩টি মামলা। পাশাপাশি হাই কোর্টের নির্দেশে স্থগিত মামলার সংখ্যা ১ হাজার ৬০৭টি। বিচারাধীন এসব মামলার মধ্যে ৩২ হাজার ৯৭২টি মামলাই ঝুলছে পাঁচ বছরের বেশি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকরাই দায়িত্ব পালন করেন শিশু আদালত ও মানব পাচার মামলার। গত ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত শিশু আদালতে ৪২ হাজার ৫৬৯টি এবং মানব পাচারের ৫ হাজার ২১৯টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে সুপ্রিম কোর্টের পরিসংখ্যান অনুযায়ী। এদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলোতে মামলার চাপ কমানোর চিন্তা করছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদও। তিনি এসব ট্রাইব্যুনাল থেকে শিশু অপরাধের বিচার আলাদা করতে স্বতন্ত্র শিশু আদালত প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায় জানিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট থেকে এ-সংক্রান্ত চিঠি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, স্বতন্ত্র শিশু আদালত গঠন করা হলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন মামলার চাপ কমবে। অন্যদিকে নারী ও শিশু নির্যাতনের বিচার দ্রুত করতে অন্তত আরও ২০০ ট্রাইব্যুনাল গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন বিচারকরা। বিচারকদের সংগঠন জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে এমন আহ্বান জানায়। সংগঠনের সভাপতি মো. আমিরুল ইসলাম ও মহাসচিব মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, দেশে বিদ্যমান নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলো নানা কারণে তাদের প্রত্যাশিত কাজ করতে পারছেন না। বিচারাধীন মামলা এবং বাস্তবতা বিবেচনায় এবং নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার দ্রুত বিচারের স্বার্থে অবিলম্বে কমপক্ষে আরও ২০০টি ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল’ গঠন জরুরি। ওই বিবৃতিতে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও সংঘটিত অপরাধগুলোর দ্রুত বিচারের স্বার্থে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল থেকে অতিরিক্ত দায়িত্ব সরিয়ে পৃথক শিশু আদালত ও মানব পাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল গঠনেরও আহ্বান জানানো হয়।

জানতে চাইলে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, সরকারের একটা ভ্রান্ত নীতি হচ্ছে, বিচার বিভাগকে বলে দিলাম এক সপ্তাহের মধ্যে বিচার শেষ করতে। আর বিচার শেষ হয়ে গেল। বিচার বিষয়টা ঠিক এমন না। একজন বিচারককে অবশ্যই জবানবন্দি, সাক্ষ্য, জেরাসহ অনেকগুলো ধাপ পার হতে হয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে। ফৌজদারি বিচারের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত পলিসি হচ্ছে কোনো অপরাধী ছাড়া পেলেও কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে সাজা দেওয়া যাবে না। তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের অনেক বিচারক রুম শেয়ার করে বসেন। অনেক জেলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারকই নেই। এমন পরিস্থিতিতে বিচার ত্বরান্বিত হবে না। বিচার দ্রুত করতে হলে লোকবল বাড়াতে হবে। বিচারকদের লজিস্টিক সাপোর্ট বাড়াতে হবে। এরপর বলা যাবে দ্রুত বিচার করেন। কিন্তু ঢাল নাই তলোয়ার নাই নিধিরাম সর্দার করে রেখে দ্রুত বিচার করতে বলে কোনো লাভ হবে না। এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, কোনো সরকারই গোড়ায় হাত দিচ্ছে না। অথচ জনপ্রিয়তা বাড়াতে সাত দিন, ১৫ দিনে বিচারের কথা বলছেন। বিচার অবশ্যই হতে হবে, তবে সেই বিচার যেন হয় ন্যায়বিচার। বিচারের ক্ষেত্রে আবেগ দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। একজন বিচারকেরও সৃষ্টিকর্তার কাছে দায়বদ্ধতা রয়েছে। রাষ্ট্র যদি এই বিচার বিভাগ নিয়ে মহাপরিকল্পনা না করে, তাহলে এসব বিচার দ্রুত করার সুযোগ নেই বলেই মত এই আইনজীবীর।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram