চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ বাড়লেও কমেছে ঋণ প্রতিশ্রুতি ও বিতরণের পরিমাণ। এতে দেশের অর্থনীতিতে চাপ বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নয়ন প্রকল্প ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের তুলনায় ঋণ প্রতিশ্রুতি ৯১.০৭ শতাংশ এবং বিতরণ ২৭.০৭ শতাংশ কমেছে। তবে ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ২৮.৪৪ শতাংশ, যা দেশের আর্থিক সম্পদগুলোর ওপর চাপ বাড়ানোর প্রতিফলন।
জানা গেছে, জুলাই-নভেম্বর সময়ে উন্নয়ন অংশীদাররা ৫২২.৬৮ মিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের ৫.৮৬ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় অনেক কম। আর বিতরণ কমে ২.১১ বিলিয়ন ডলার থেকে ১.৫৪ বিলিয়ন ডলারে এসেছে। একই সময়ে বাংলাদেশ ১.৭১ বিলিয়ন ডলার মূলধন এবং সুদ পরিশোধ করেছে, যা গত বছরের ১.৩৩ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় বেশি।
বর্তমান পরিস্থিতিতে অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এ অবস্থায় আগামী উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক অর্থায়ন নিশ্চিত করতে কঠিন হতে পারে। বিশেষ করে ঋণ প্রতিশ্রুতি এবং বিতরণে হ্রাস বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়তে পারে। কারণ ঋণ পরিশোধের খরচ বৃদ্ধির কারণে সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ খাতÑ যেমন অবকাঠামো ও সামাজিক কর্মসূচিতে বিনিয়োগ সীমিত করতে হতে পারে।
ইআরডি কর্মকর্তারা বলেছেন, জুলাই এবং আগস্ট মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়েছে। ফলে বিতরণ কমেছে। এ অবস্থায় বৈদেশিক ঋণে তহবিলপ্রাপ্ত অনেক প্রকল্প স্থগিত হয়ে গেছে। বিদেশি পরামর্শক এবং কর্মীরা অনুপস্থিত থাকায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি সরকার বর্তমানে ঋণ প্রস্তাবগুলোর পর্যালোচনা করছে, যা নতুন ঋণ চুক্তির জন্য সাময়িকভাবে স্থগিত হয়েছে। পর্যালোচনা শেষ হলে ঋণ আবেদন প্রক্রিয়া শুরু এবং লক্ষ্য পূরণের জন্য চেষ্টা করবে সরকার। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকসহ (এডিবি) উন্নয়ন অংশীদাররা বাংলাদেশে বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়নে সহায়তার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সে অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকার বৈদেশিক অর্থায়নে প্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো অগ্রাধিকার এবং অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো বন্ধের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। সে অনুযায়ী ইআরডি সংস্থাগুলোকে বৈদেশিক ঋণ বরাদ্দের জন্য অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর একটি তালিকা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে এডিবি ছিল সর্বোচ্চ বিতরণকারী অংশীদার। তারা ৩১৮ মিলিয়ন ডলার, জাপান ৩০৮ মিলিয়ন ডলার, রাশিয়া ২৪৫ মিলিয়ন ডলার, বিশ্বব্যাংক ২০৫.৪৪ মিলিয়ন ডলার এবং ভারত ৬৩.৪২ মিলিয়ন ডলার বিতরণ করেছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জহিদ হোসেন বলেন, যদি দেশের রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি না পায় এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ উন্নত না হয়Ñ তবে ঋণ পরিশোধের বাড়তি চাপ অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে। তিনি জানান, পদ্মা সেতু, রেলসংযোগ এবং বঙ্গবন্ধু টানেলের মতো বড় প্রকল্পের ঋণ পরিশোধের চাপ বাড়ছে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।