শফিকুল ইসলাম মিন্টু, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের গৌরীপুরে মাটির নিচে শত বছরের পুরোনো দুইটি লোহার সিন্দুকের সন্ধান মিলার পর গুপ্তধনের সন্ধান পাওয়া গেছে এমন খবর ছড়িয়ে যায় সারা শহরে। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ডরুম ভাঙার পর শ্রমিকরা মাটি কাটার সময় এ দুটি সিন্দুকের সন্ধান পায়।
এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ‘গুপ্তধনের লোহার সিন্দুক’ দেখতে উৎসুক জনতার ভিড় জমে সেখানে। খবরটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়লে তা ‘টক অব দ্য টাউনে’ পরিণত হয়।
১৯১২ সালে উপজেলার পৌর শহরের পশ্চিম দাপুনিয়া এলাকায় সাব-রেজিস্ট্রি অফিসটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সোমবার সকাল থেকে ১১ জন শ্রমিক তৎকালীন রেকর্ডরুম ভাঙার পর পাকা ভবনের মেঝে ভেঙে দুপুরের দিকে মাটির নিচে লোহার সিন্দুক দেখতে পায়। তা কর্তৃপক্ষকে জানালে কয়েক ঘন্টার চেষ্টায় মাটি খুঁড়ে দুটি লোহার সিন্দুক উত্তোলন করে।
উত্তোলনকারী কর্মীরা জানায়, ছোট সিন্দুকের ওজন প্রায় দুই মণ। উচ্চতা ১ ফুট ৩ ইঞ্চি, লম্বা ১ ফুট ১১ ইঞ্চি, প্রস্থ ১ ফুট ৩ ইঞ্চি। ভিতরে ৩টি ভাগে বিভক্ত। বড় সিন্দুকটির ওজন ৪-৫ মণ হবে। উচ্চতা ১ ফুট ৮ ইঞ্চি, লম্বা ২ ফুট ৮ ইঞ্চি, প্রস্থ ১ ফুট ১১ ইঞ্চি। এটা দুভাগে বিভক্ত। সিন্দুক দুটি উপরের অংশ বিশেষ আকৃতির লক দিয়ে বন্ধ করা ছিল। দীর্ঘদিন মাটির নিচে পড়ে থাকায় সিন্দুক দুটি মরিচা পড়ে চারপাশ লালচে রঙের হয়ে গেছে। সিন্দুকে সোনা-রূপাসহ মূল্যবান জিনিস রয়েছে এমন শঙ্কায় উৎসুক জনতা ভিড় করলে পরে সাব-রেজিস্ট্রার মো. রফিকুল ইসলাম, দলিল লেখক সমিতির নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয় মানুষের উপস্থিতিতে হাতুড়ি-শাবল দিয়ে ভাঙা হয়। কিন্তু সিন্দুকের ভিতরে মূল্যবান তেমন কিছুই পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে কিছু কাগজ, চাবি ও অব্যবহৃত কয়েকটি সিল।
এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর সাব-রেজিস্ট্রার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বড় সিন্দুকটিতে মাত্র ২টি পুরাতন চাবি, ছোট সিন্দুকে ১৯৮০ সালের একটি অসম্পাদিত দলিল, কয়েকটি ৫২ ধারার নোটিশ আর কিছু পুরাতন অপ্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ১৯৮০ সালের পরে আর এটি খোলা হয়নি। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে সিন্দুক দুটি মাটি খুঁড়ে বের করা হয়েছে। সিন্দুক দুটি বর্তমানে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের বর্তমান রেকর্ড রুমে রাখা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরবর্তী সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাচিবেশ শাহিদ মুনশী জানান, দীর্ঘদিন যাবত রেকর্ডরুমটি অব্যবহৃত ছিল। এটি অপ্রয়োজনীয় হওয়ায় ভাঙার সময় সিন্দুক ২টি দেখা যায়। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করার পর অনুমোদন সাপেক্ষে সাংবাদিক ও সবার সম্মুখে উত্তোলন এবং খোলা হয়। এটা নিয়ে সবার মাঝে নানা সন্দেহ বিরাজ করছিল, যার অবসান হলো।