টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) প্রতিনিধি: টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০০ শয্যার সুবিধা নিয়ে স্থানীয় জনগণের সেবায় কাজ করলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন ও রোগীরা সুবিধা পাচ্ছে ৫০ শয্যার জন্য। এই তথ্য স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ হাসপাতালকে ৫০ শয্যা হতে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা শ্রেফ কাগজে কলমে। বাস্তবতায় এর কোন ভিত্তি নেই। এটি টুঙ্গিপাড়ার মানুষের সাথে প্রহসন করা হয়েছে।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি স্থানীয় বাসিন্দাসহ আশপাশের জেলার জন্য প্রাথমিক ও জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছে। সরকারি হাসপাতাল হিসেবে বহিঃবিভাগীয় ও জরুরী চিকিৎসা সেবা, অন্তঃবিভাগীয় চিকিৎসা সেবা, ঔষধ সরবরাহ, রোগ প্রতিষেধক টিকা প্রদান কার্যক্রম (সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচী), প্রজনন স্বাস্থ্য ও গর্ভাবস্থা পরিচর্যা প্রসব ও প্রসূতি সেবা, সমন্বিত শিশু রোগ চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
জানা যায়, ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১০০ শয্যা বিশিষ্ট প্রশাসনিক অনুমোদন পেলেও জনবলের অনুমোদন না থাকায় এই কমপ্লেক্সটি বর্তমানে ৫০ শয্যার সকল সুযোগ সুবিধা পেয়ে যাচ্ছে, যদিও অবকাঠামোগতভাবে ১০০ শয্যার সেবা প্রদানের সক্ষমতা রয়েছে।
বর্তমানে হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন গড়ে প্রতিদিন ৫শ থেকে ৬শ জন এবং আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন গড়ে প্রতিদিন ৪০ থেকে ৪৫ জন রোগী। এ ছাড়াও রয়েছে প্রায় দীর্ঘদিন যাবত জনবলের সংকটসহ নানা সমস্যা। অপরদিকে, ওষুধের স্বল্পতা থাকায় সব রোগীদের ওষুধ দেয়া যাচ্ছে না। আউটডোরে রোগীদের ওষুধ দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। প্রতিদিন আউটডোরে প্রায় ৫শ থেকে ৬শ রোগী দেখতে হিমশিম খেতে হয় চিকিৎসকদেরকে।
কোটালীপাড়া উপজেলার তরুর বাজার থেকে আসা রমা বেগম বলেন, রবিবার সন্ধ্যায় আমার মেয়ের ডায়রিয়ার সমস্যা হওয়ার কারণে হাসপাতালে ভর্তি হই। সন্ধ্যায় শুধু স্যালাইন দিয়ে গেছে। এখন পর্যন্ত একজন ডাক্তার আমার মেয়েকে দেখতে আসেনি। বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলা থেকে আসা রমজান মোল্লা জানান, দুদিন রয়েছি, খাবার খুব বাজে। যে খাবার দেয় তা খাওয়া যায়না।
এ ছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আনাচে কানাচে মাদকসেবীদের আড্ডা বেড়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির জনবল সংকটসহ বিভিন্ন সমস্যা কবে নাগাদ সুরাহা হবে এমন আশার বাণী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোন কর্মকর্তাই হলফ করে বলতে পারছেন না।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন কর্মকর্তা জানান, “আমরা ১০০ শয্যার সুবিধা দিয়ে রোগীদের সেবা দিচ্ছি, তবে অধিদপ্তরের অনুমোদন বাড়িয়ে ১০০ শয্যায় উন্নীত করার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে আরও উন্নত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। তবে, চিকিৎসক ও নার্সের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং আধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সংযোজনের মাধ্যমে সেবার মান আরও উন্নত করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।
হাসপাতাল সূত্রে আরো জানা যায়, বর্তমানে তীব্র গরমে ডায়রিয়া সহ অন্যান্য রোগীদের চাপ বেড়েছে। প্রতিদিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিতে ৬শ জনের অধিক রোগীরা বহির্বিভাগে চিকিৎসা সেবা নিয়ে থাকেন। এদিকে টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ২৭ জন চিকিৎসকের জায়গায় ৭ জন কর্মরত এবং প্রেষণে আট জন দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। এছাড়াও রেডিওগ্রামের জন্য দুইজন টেক্সনিশিয়ান ৫ আগস্টের পর থেকে চাকরি ছেড়ে চলে যায়। যার কারণে চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হয়।
টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা: তানভীর আহমেদ জানান, টুঙ্গিপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং পূর্ণাঙ্গ ১০০ শয্যার অনুমোদনের বিষয়টি পর্যালোচনাধীন রয়েছে। ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। বর্তমানে রোগীদের জন্য শতকরা ৩০ ভাগ ঔষধের স্বল্পতা রয়েছে, ঠিকাদারকে বলা হয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি ঔষধ হাসপাতালে চলে আসবে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার জন্য আউটসোর্সিং এর বরাদ্দ হলে নিয়োগ দেয়া হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় জনগণের স্বাস্থ্যসেবায় আরও বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।