মো. আনোয়ার হোসেন, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) প্রতিনিধি: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলা কৃষি অফিসের ইনোভেশন কার্যক্রমের আওতায় প্রথমবারের মত ধানের জমিতে ট্রায়াল দেওয়া হয়েছে ন্যানো ইউরিয়া (তরল ইউরিয়া) সারের কার্যকারীতা। সারা বিশ্বে যখন পরিবেশ বিপর্যয়ের জন্য রাসায়নিক সারের অতিরিক্ত ব্যবহারকে দায়ী করা হচ্ছে, তখনই বিজ্ঞানের নতুন সংযোজন ন্যানো টেকনোলজির আবিষ্কৃত ন্যানো ইউরিয়া সার ব্যবহারে উৎসাহিত করা হচ্ছে।
ন্যানো ইউরিয়া হলো আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এক ধরনের তরল ইউরিয়া সার, যেখানে ইউরিয়ার কণা গুলো ন্যানো-আকারে (অতি ক্ষুদ্র) তৈরি করা হয়। এটি সাধারণ দানাদার ইউরিয়ার তুলনায় অনেক বেশি কার্যকর। এর সুবিধা হচ্ছে কম পরিমাণে বেশি কার্যকারিতা। এক লিটার ন্যানো ইউরিয়া প্রায় ৪৫ কেজি দানাদার ইউরিয়ার সমতুল্য কাজ করতে পারে। ফলে কৃষকের সার বাবদ খরচ অনেক কমে যায়। ন্যানো ইউরিয়া দ্রুত গাছের দেহে শোষিত হয়, তাই গাছ দ্রুত পুষ্টি পেয়ে ফলন বৃদ্ধি করে। অতিরিক্ত দানাদার ইউরিয়া ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ নষ্ট হয় এবং পরিবেশ দূষণ হয়। ন্যানো ইউরিয়া ব্যবহারে তা কমে আসে। এটি স্প্রে করে ছিটিয়ে দেয়া যায়, মাটিতে দিতে হয় না।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ব্রি-৯২ ধানের জমিতে প্রথমবারের মত ন্যানো ইউরিয়া স্প্রে করা হয়। প্রতি শতক জমিতে এক লিটার পানিতে ৪ মিলি ন্যানো ইউরিয়া স্প্রে করে আশাতীত ফলাফল পাওয়া গেছে। চারা রোপণের পর থেকে ধানের বৃদ্ধি পর্যায়ে তিন বার ১৫ থেকে ২০ দিন অন্তর অন্তর এই সার প্রয়োগ করা হয়।
ইব্রাহিমপুর গ্রামের কৃষক ফরিদা বেগম জানান, কৃষি বিভাগের পরামর্শে এই প্রযুক্তি আমি গ্রহণ করি, জমিতে তরল ন্যানো ইউরিয়া ১৫ থেকে ২০ দিন পর পর তিন বার পাতায় স্প্রে করি। ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে। এই পদ্ধতিতে আমাদের জন্য সার প্রয়োগ সহজ হবে, আমাদের আর্থিক খরচ ও কমে যাবে। গ্রামের অন্যান্য কৃষক মো. জাহাঙ্গীর, সুমন মিয়া, আতিকুল ইসলাম, নুর আহাম্মদ, মনু মিয়া, মোবারক মিয়া, জাহানার বেগাম, হেনা বেগম জানান, কৃষিতে এই নতুন আবিষ্কার আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। বস্তায় বস্তায় ইউরিয়া সার আনা, তা ব্যবহার করা অনেক পরিশ্রমের কাজ। ন্যানো ইউরিয়া একই কাজ করে।
উপসহকারী কৃষি অফিসার গিয়াস উদ্দিন নাঈম জানান, প্রযুক্তিটি মাঠে প্রয়োগ করতে প্রথম থেকেই নিয়ম মাফিক মাত্রা অনুসারে ব্যবহার করা হয়। পাতায় স্প্রে করায় ইউরিয়ার কার্যকারিতা ভালো ছিল। পাতার মাধ্যমে গাছ তার প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন সংগ্রহ করে। যে সকল ধান দীর্ঘমেয়াদি সেখানে তিনবার, নতুবা দুইবার স্প্রে করলে যথেষ্ট, গাছের বৃদ্ধি এবং কুশির সংখ্যা অনেক ভাল।
উপজেলা কৃষি অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন জানান, ন্যানো ইউরিয়ার নাইট্রোজেন গাছ মূলত আমোনিয়া এবং নাইট্রেট ফর্মে সরাসরি গ্রহণ করে না যেমনটা মাটির ইউরিয়ার ক্ষেত্রে হয়। গাছের পাতার শোষণকৃত কণা গুলো উদ্ভিদের অভ্যন্তরে ভেঙে গিয়ে নাইট্রোজেন দেয় অ্যামোনিয়াম ও নাইট্রেট আকারে, যা গাছের জন্য ব্যবহারযোগ্য। ধাপে ধাপে নাইট্রোজেন মুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া গাছের জন্য বেশি কার্যকর এবং পরিবেশের জন্যও নিরাপদ। এ প্রযুক্তি নিয়ে সারা বিশ্বে কাজ হচ্ছে, আমরাও এ প্রযুক্তি জনপ্রিয় করতে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলবো।