তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধি: কৃষক যেন কম খরচে ধান কাটতে পারেন, সে জন্য সরকার ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে সমন্বিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় ২টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন বিতরণ করে। তবে সরকার ৫০ শতাংশ ভর্তুকি মূল্যে এসব মেশিন সরবরাহ করলেও মেশিন মালিকরা উপজেলা কৃষি অফিসের নির্দেশনা অমান্য করে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছে কৃষকদের কাছ থেকে। এবং মেশিন কম থাকায় এর সুফল পাচ্ছে না অনেক কৃষকরা, শ্রমিকের মাধ্যমে বাড়তি টাকা দিয়ে ধান কাটতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্য মতে, ২০২০-২১ ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষি বিভাগ তিতাস উপজেলায় ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে কৃষকের মাঝে ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ২টি কম্বাইন হারভেস্টার বিতরণ করেছে। দুইটির মধ্যে বর্তমানে একটি বিকল হয়ে পড়ে আছে। এছাড়াও এবছর মৌসুমে উপজেলায় ৬ হাজার ৮০৯ হেক্টর ধান চাষ করা হয়েছে, যার লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৬ হাজার ৭৯০ হেক্টর।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার মাছিমপুর দক্ষিণ চকে ধান কাটছেন সরকার থেকে ভর্তুকিতে পাওয়া উপজেলার পোড়াকান্দি গ্রামের হারভেস্টার মালিক রিমন সরকার। কানি প্রতি (৩০ শতাংশ) কৃষকদের নিকট থেকে ৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা নিচ্ছে। উপজেলা পূর্ণবাসন কমিটি প্রতি কানি ২ হাজার ৬০০ টাকা নির্ধারণ করে দিলেও, সেই নির্দেশনা মানছেন না হারভেস্টার মেশিনের মালিকরা। তবে শুধু রিমন নয় উপজেলার অনেক হারভেষ্টার মালিকগণ অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে।
মাছিমপুর গ্রামের কৃষক ফারুক ও মনসুর আলী বলেন, হারভেস্টার মেশিনের মালিকরা যার কাছ থেকে যত পারে ততই নিচ্ছে। তবে সর্বনিম্ন কানি প্রতি সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত নিচ্ছে।
কদমতলী, আলীনগর ও কলাকান্দি গ্রামের কৃষক তারা মিয়া, শাহজাহান ও লিটন বলেন, আমরা জানি কৃষি অফিস কানি প্রতি ২ হাজার ৫০০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে দিছে, কিন্তু মেশিন মালিকরা এই নির্দেশনা অমান্য করে কানি প্রতি ১ থেকে দেড় হাজার টাক বেশি নিচ্ছে। তবে কৃষকদের অভিযোগ চাহিদার তুলনায় তিতাসে মেশিন কম থাকায় এমন দাম দিতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনের মালিক মো. রিমন সরকার বলেন, কৃষক আমাদের সাথে জমির সঠিক শতাংশ বলে না, ৩০ শতাংশকে ২০ বা ২৫ শতাংশ বলে এবং অনেক সময় ৩০ শতাংশ জমি কাটতে হাফ কিলোমিটার দুরে যেতে হচ্ছে। এতে আমার ৫ থেকে ৬ লিটার তেল বেশি লাগে। তাহলে ঐ টাকাটা আমি কইতে আইনা দিমু।
অপর হারভেস্টার মালিক আমজাত বলেন, ২০২১ সালে আমি মেশিনটি পাইছি, ৩ বছর চালানোর পর গতবছর সিজন শেষে মেশিনটি নষ্ট হয়ে যায়। বর্তমানে মেশিনটি অচল অবস্থা পড়ে আছে। তবে এইবছর আমি ব্যক্তিগতভাবে কিস্তির মাধ্যমে দুইটি মেশিন কিনিছি৷ নতুন মেশিনের কোন যন্ত্রপাতি লাগলে নষ্ট মেশিন থেকে খুলে এনে লাগাই। অচল মেশিনটি বর্তমানে কোথায় আছে জানতে চাইলে এবং দেখতে চাইলে আমার দেশের প্রতিবেদককে আমজাদ বলেন, আমার বাড়ি জায়গা নাই তাই আমার শশুর বাড়ি পাশ্ববর্তী উপজেলার সাতমোড়া রেখেছি।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাইফ আব্দুল্লাহ মোস্তাফিন বলেন, ভর্তুকিতে দেওয়া হারভেস্টার মালিকদের কানি প্রতি ২ হাজার ৬০০ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যদি এখন বেশি টাকা নেয় তাহলে প্রমান পেলে ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।