গোপাল অধিকারী, ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি: ঈশ্বরদী উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের কদিমপাড়া গ্রামের গফুর মৃধার ছেলে আদর্শ মৌ খামারের স্বত্বাধিকারী শাহজাহান আলী এ্যাপিস মেলিফেরা মৌ চাষ করে আজ স্বাবলম্বী হয়েছেন। কামিল পাস করে এক রকমের বেকার হয়ে চোখে হতাশ হয়ে পড়েন শাহজাহান। কি করবেন তখন ভেবে পাচ্ছিলেন না। এক সময় তার একজন বন্ধুর পরামর্শে ১৯৯৭ সালে পাবনা বিসিক থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাত্র ৪টি খাঁচা দিয়ে মৌ চাষে তার হাতেখড়ি। এরপর থেকে তিনি আর পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখেননি। এখন তার খামারে প্লাষ্টিকের আধুনিক ও পুরাতন মিলিয়ে ১৮২টি খাঁচা রয়েছে।
শাহজাহান বলেন, পড়াশুনা শেষ করে ব্যবসা কিংবা চাকুরিতে না ঢুকে প্রশিক্ষণ নিয়ে মৌ চাষে আত্মনিয়োগ করি। প্রথম দিকে মৌ চাষ করতে গিয়ে পরিবারের সদস্য ও প্রতিবেশিদের নানা বাঁধার সম্মুখীন হই। অনেকে বলাবলি করতেন পাগল না হলে কি কেউ মৌ চাষ করতে চায়। ধৈর্য ধরে ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত নিয়ে চারটি খাঁচা দিয়ে মৌ চাষ শুরু করি। ভক্তি সহকারে ধৈর্য ধরে কাজ করায় মৌ চাষই আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়ে দিয়েছে। এবছর সরিষা মৌসুমে ঈশ্বরদী থেকে প্রায় ৫০ মন মধু সংগ্রহের আশা পোষণ করছি।
তিনি আরও বলেন, চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া, আটঘরিয়া, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, রাজবাড়ি, সাতক্ষিরা, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করে প্রায় ৮ টনের মতো মধু এবছর পাওয়া যাবে। প্রতি কেজি মধু ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করছি। দেশের বিভিন্ন কোম্পানি এবং ব্যবসায়ীরা খামার থেকেই মধু কিনে নিয়ে যান। খাঁটি মধু হওয়ায় আশপাশের মানুষ মধু কেনার জন্য খামারে ভীড় জমায়। শিক্ষিত বেকার যুবকেরা চাকরি নামের সোনার হরিণের পিছে না ছুটে প্রশিক্ষণ নিয়ে মৌ চাষ করলে তারা ভাগ্য পরিবর্তন করতে পারবেন।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, মৌ চাষ একটি লাভজনক পেশা। শীতকালে বাজারে মধুর ব্যাপক চাহিদা থাকে। একই সাথে বাজারে মধুর দাম অনেক বেশি। ৪ থেকে ৫ শত টাকা কেজি দরে বাজারে মধু বিক্রি হচ্ছে। সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌমাছির খামার থাকায় পরগায়নের কারণে ফলন বৃদ্ধি হয়। ফলন বৃদ্ধি হওয়ায় ঈশ্বরদীতে সরিষার আবার আগের চাইতে অনেকটা বেড়েছে। নতুন নতুন চাষিরা সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ খামার থাকায় শতকরা ২৬ ভাগ সরিষা বেশি পেয়ে থাকেন কৃষকেরা। মৌ চাষিরাও অধিক মাত্রায় মধুু পেয়ে থাকেন। মৌ পালনে চাষির ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটে। মৌ চাষি শাজাহান তার বাস্তব প্রমাণ।