ঢাকা
৯ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
ভোর ৫:৫০
logo
প্রকাশিত : জুন ১৫, ২০২৫

সৎ মা ইস্যুতে ফেঁসে যাচ্ছেন অভিনেত্রী শাওন

অভিনেত্রী শাওনের সৎ-মা নিশি ইসলামের বিরুদ্ধে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা, বলপ্রয়োগ করে টাকা আদায় ও ভীতি প্রদর্শনের অপরাধে করা মামলায় অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। এই মামলায় আসামিদের অব্যাহতি চেয়ে ১৯ মার্চ আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে পুলিশ। অব্যাহতি চাওয়া আসামিদের মধ্যে নিশি ইসলাম ছাড়াও তার সাবেক স্বামী আল মাহফুজ খান রয়েছেন। পাশাপাশি আসামিদের হয়রানি করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা করায় মামলার বাদী অভিনেত্রী শাওনের বোন মাহিন আফরোজ শিঞ্জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বাড্ডা থানার সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) কাজী ইকবাল হোসেন বলেন, মামলাটি সার্বিক তদন্তকালে প্রাপ্ত তথ্য, সাক্ষ্যপ্রমাণ, আনুষঙ্গিক কাগজপত্র পর্যালোচনা এবং ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় দেখা যায় যে, এ মামলার এজাহারনামীয় আসামি মোছা. নিশি ইসলাম এবং আল মাহফুজ খানের বিরুদ্ধে বাদীর আনীত অভিযোগ প্রাথমিকভাবে মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে।

তদন্তে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে, আমি বিবাদীদের মামলার দায় হতে অব্যাহতি দেওয়ার আবেদন জানাই। সেই সঙ্গে বাদিনী মাহিন আফরোজ শিঞ্জন হয়রানির উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলা করায় তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ২১১ ধারায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন জানাচ্ছি।

আদালতের বাড্ডা থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা এসআই জারি হোসেন বলেন, এ মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। বাদীর প্রতি নোটিশ ইস্যু করেছেন আদালত। ১০ জুলাই মামলার পরবর্তী তারিখ ঠিক করা হয়েছে।

২০২৪ সালের ৫ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওনের বোন মাহিন আফরোজ শিঞ্জন বাদী হয়ে বাড্ডা থানায় এ মামলাটি করেন। মামলায় নিশি ইসলাম ও আল মাহফুজ খানকে আসামি করা হয়।

মামলার অভিযোগে মাহিন আফরোজ শিঞ্জন বলেন, তার বাবা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী একজন সুপরিচিত ব্যবসায়ী। ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে নিশি ইসলাম (২৯) ও আল মাহফুজ খান (২৪) নামের দুই ব্যক্তি তার বাবার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগ শুরু করেন। তারা নিজেদের ভাই-বোন পরিচয় দিয়ে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করে এবং বিভিন্ন সময় দেখা করার নাম করে তার বাবাকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান।

পরে ২১ ফেব্রুয়ারি দুই ব্যক্তি উত্তর বাড্ডার পদ্মা গার্ডেন এলাকার একটি বাসায় তার বাবাকে ডেকে নেন। ওই সময় নিশি ইসলাম তার বাবাকে জোর করে বিয়েতে রাজি করান এবং হুমকি দেন, বিয়ে না করলে সমাজে অপমানজনক মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দেবে। ভয়ে এবং সামাজিক সম্মানের কথা ভেবে ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হন। সেদিনই একটি রেজিস্ট্রার বইয়ের মতো কাগজে জোর করে স্বাক্ষরও করানো হয়।

পরবর্তীতে বাদী খোঁজ নিয়ে জানতে পারে, নিশি ইসলাম ও আল মাহাফুজ আসলে স্বামী-স্ত্রী এবং একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্য। তারা বিভিন্ন সময় সমাজের সম্মানিত ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করে মিথ্যা পরিচয়ে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলে এবং পরে বিয়ে ও মান-সম্মানের ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করে। এ মামলায় পুলিশ নিশি ইসলামকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করে।

চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, নিশি ইসলাম ও আল মাহফুজ খান পূর্বে সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী থাকলেও তাদের মধ্যে বনিবনা না হওয়ায় ২৩ সালের ৫ মে তাদের স্বামী-স্ত্রীর বৈবাহিক সম্পর্ক বিচ্ছেদ হয়। অপরদিকে ভিকটিম ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী স্বেচ্ছায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ইচ্ছে পোষণ করলে ম্যারেজ মিডিয়ার মাধ্যমে নিশি ইসলামের সঙ্গে পরিচয় হয়। পরিচয়ের সুবাধে তাদের মধ্যে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। তারা উভয়ের সম্মতিক্রমে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুযায়ী হাস্যোজ্জ্বল পরিবেশে ২০২৪ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি পরস্পর নিকাহনামায় স্বাক্ষর করেন এবং উচ্চ আওয়াজে ‘আলহামদুলিল্লাহ কবুল’ বলে বিবাহের কাজ সম্পন্ন করেন।

এছাড়া মামলার এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী বিকাশ স্টেটমেন্ট পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, বাদিনীর অভিযোগের তথ্যানুযায়ী বিবাদীরা ইঞ্জি. মোহাম্মদ আলীকে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে চাঁদা দাবি ও ১ লাখ টাকা চাঁদা গ্রহণের বিষয়টির সত্যতাও প্রমাণিত হয়নি।

এ মামলার সাক্ষী মান্নাক আফরোজ সেঁজুতি বাদীর বোন এবং সাক্ষী হাসানুজ্জামান বাদীর বন্ধু হওয়ায় তারা বাদীর কাছ থেকে শোনা তথ্যের ভিত্তিতে এজাহারের পক্ষে জবানবন্দি প্রদান করলেও, প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষ্য ও প্রাপ্ত ডকুমেন্ট বিশ্লেষণে ঘটনার প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটিত হয়েছে বলেও চূড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাড্ডা থানার এসআই কাজী ইকবাল হোসেন বলেন, এ বাদীর অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি। তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছি।

এ বিষয়ে মামলার বাদী অভিনেত্রী শাওনের বোন মাহিন আফরোজ শিঞ্জনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এটা একটা কোর্ট প্রসিডিউর। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো আলোচনা করতে চাচ্ছি না। মামলায় চার্জশিট দিয়েছে নাকি ফাইনাল রিপোর্ট দিয়েছে এটা আদালত আমাদের বলবে, আদালতের সঙ্গে এটা আমাদের বিষয়। সাংবাদিকদের কাছে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছি না।

এদিকে এ ঘটনায় চলতি বছরের ১৩ মার্চ ভুক্তভোগী নিশি ইসলাম হত্যাচেষ্টা ও মারধরের অভিযোগে শাওনসহ ১২ জনকে আসামি করে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ২২ এপ্রিল উভয়পক্ষকে আদালতে উপস্থিত হওয়ার জন্য সমন জারি করেছিলেন।

এ মামলার আসামিরা হলেন-মেহের আফরোজ শাওনের বাবা ইঞ্জিনিয়ার মো. আলী, মেহের আফরোজ শাওন, তার বোন মাহিন আফরোজ শিঞ্জন ও সেঁজুতি, শিঞ্জনের স্বামী সাব্বির, এডিসি নাজমুল, সুব্রত দাস, মাইনুল হোসেন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদ, পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া, উপ-পরিদর্শক শাহ আলম ও মো. আলীর ভাগনে মোখলেছুর রহমান মিল্টন।

পুলিশ পরিদর্শক সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া ও উপ-পরিদর্শক শাহ আলম ২২ এপ্রিল আদালতে হাজির হয়ে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন। আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেন এবং বাকি দশ আসামি আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।

পরবর্তীতে বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলার আসামি অভিনেত্রী ও গায়িকা মেহের আফরোজ শাওন, সাবেক ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদসহ ১২ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন আদালত। ১ জুলাই এ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।

মামলার বাদী নিশি ইসলাম বলেন, আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, জেল খাটানো হয়েছে। আমি তাদের সবার শাস্তি দাবি করি।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram