ঢাকা
১৮ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ৮:২২
logo
প্রকাশিত : জানুয়ারি ১৩, ২০২৫

মাত্র ৩ কোটি টাকায় ১২টি উড়োজাহাজ কেনার প্রস্তাব

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থাকা পরিত্যক্ত ১২টি উড়োজাহাজ কেনার জন্য পানির দর হাঁকিয়েছে সেনা কল্যাণ সংস্থা। মাত্র ৩ কোটি ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকায় উড়োজাহাজগুলো কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। সম্প্রতি বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে (বেবিচক) দেওয়া চিঠিতে এমন প্রস্তাব দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

উল্লেখ্য, বছরের পর বছর ধরে বিমানবন্দরের রানওয়ের ‘গলার কাঁটা’ হয়ে থাকা পরিত্যক্ত এসব উড়োজাহাজ নিলামে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বেবিচক। নিলামের আগে ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ নিয়ে আলোচনাও চলছে। অকেজো উড়োজাহাজগুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনাইটেডের ৮টি, রিজেন্ট এয়ারওয়েজের ২টি এবং জিএমজি ও এভিয়েনা এয়ারলাইন্সের একটি করে বিমান।

উড়োজাহাজগুলোর মালিক এয়ারলাইন্সগুলো বলছে, বেবিচক চাইলেও এগুলো নিলামে বিক্রি করতে পারে না। কারণ প্রতিটি উড়োজাহাজের বিপরীতে ব্যাংকঋণ রয়েছে। বিক্রি প্রক্রিয়ায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ঋণদাতা ব্যাংকগুলো।

গত বছর নিলামে তোলার সব প্রক্রিয়া শেষ বলা হলেও এখন বেবিচক বলছে, এসব উড়োজাহাজের মূল্য নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক বা প্রতিষ্ঠান লাগবে। নিলামে তোলার জন্য এসব মালামালের ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করতে হবে। কিন্তু আমাদের এমন জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লোকবল নেই। এ জন্য আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন

পরামর্শক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করার জন্য কমিটি গঠন করা হবে। কমিটি আন্তর্জাতিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান চূড়ান্ত করার পর তারা মূল্য নির্ধারণ করে দেবে। তারপর টেন্ডারের মাধ্যমে এগুলো নিলামে বিক্রি করা হবে। দ্রুত এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নিয়োগ দেওয়ার আগে দেশীয় এয়ারলাইন্সের কাছে সহায়তা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে সেনা কল্যাণ সংস্থা গত ৩১ ডিসেম্বর ১২টি অকেজো উড়োজাহাজ এবং আনুষঙ্গিক ইঞ্জিন ও সরঞ্জাম স্ক্র্যাপ হিসেবে কেনার জন্য ৩ কোটি টাকার প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবে বলা হয়, সেনা কল্যাণ সংস্থার অধীন ট্রেডিং ডিভিশন কর্তৃক সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের অকেজো অনুপযোগী বিভিন্ন ধরনের স্ক্র্যাপ ও অন্যান্য মালামাল ক্রয় করে আসছে। বেবিচকের আওতাধীন ১২টি অকেজো উড়োজাহাজ এবং আনুষঙ্গিক ইঞ্জিন ও সরঞ্জাম আমাদের প্রতিনিধি পরিদর্শন করেছেন। এগুলো আয়কর ও ভ্যাট ছাড়া ৩ কোটি ৭ লাখ ৭০ হাজার টাকায় কিনতে ইচ্ছুক সংস্থাটি। সেই সঙ্গে এসব মালামাল সেনা কল্যাণ সংস্থাকে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিশেষভাবে অনুরোধ জানানো হয়েছে চিঠিতে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেবিচক এগুলো নিলামে বিক্রি করবে, অবশ্যই তা স্ক্র্যাপ হিসেবে। আন্তর্জাতিক বাজারে এগুলোর ভালো মূল্য রয়েছে। কিন্তু নিলামে স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রি করলে প্রকৃত মূল্য পাওয়া যাবে না। অথচ এগুলো অনেক বেশি দামে বিক্রি করা সম্ভব। বেবিচককে সেই প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা মানেনি। এখন বেবিচক মূল্য নির্ধারণের জন্য আন্তর্জাতিক পরামর্শক নিয়োগ দিয়ে অযথা টাকা খরচ করবে। পরামর্শককে যত টাকা দিতে হবে বিক্রি করে এর পাঁচভাগের একভাগও উঠবে না। এর চেয়ে কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে বিক্রি করলে উভয়েই লাভবান হতো। এখন এগুলো গলার কাঁটা হয়েই থাকবে।

একটি এয়ারলাইন্সের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেন, আমরা আমাদের উড়োজাহাজগুলো বিক্রি করার জন্য আন্তর্জাতিক কোটেশন বেবিচকের কাছে জমা দিয়েছিলাম, সেটি বিক্রি করে যে টাকা পাওয়া যেত তা দিয়ে বেবিচকের পাওনা পরিশোধের কথা বলেছিলাম। কিন্তু বেবিচক শোনেনি। তারা এখন এগুলো কেজি দরে বিক্রি করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু তা পারবে না। কারণ ব্যাংকের কাছে আমাদের লোন আছে। ব্যাংক তা করতে দেবে না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, আমরা ৩০০ কোটি টাকা সারচার্জ মওকুফের জন্য আবেদন করেছিলাম। আর মূল বকেয়া ৫৫ কোটি টাকা এয়ারলাইন্স চালু হওয়ার পর ক্রমান্বয়ে দেব বলেছিলাম। এ প্রস্তাবে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মতি দেয়নি। ফলে এয়ারলাইন্স পরিচালনায় এওসি নবায়ন করতে পারিনি। এখন পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

উড়োজাহাজগুলো জায়গা দখল করে আছে এবং এগুলো খালি করা দরকার উল্লেখ করে কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বেবিচক এগুলো বিক্রি করলে একশ ভাগের একভাগ দামও পাবে না। এয়ারলাইন্সগুলো চেয়েছিল এগুলো বিক্রি করতে। তাতে তারা কিছু টাকা পেত, বেবিচকের পাওনাও কিছু দিতে পারত। বেবিচক এ বিষয়ে নীতিগতভাবে রাজি হয়নি। পুরনো হলেও এগুলোর রিসেল দাম আছে। বেবিচক সেভাবে করতে পারবে না। এয়ারলাইনগুলোর ব্যাংকে লোন থাকায়, ব্যাংক এগুলো বিক্রি করতে অনুমতি দেবে না। এখানে আইনগত ঝামেলা রয়েছে। ?

উল্লেখ্য, দীর্ঘ প্রায় এক যুগ ধরে পার্কিংয়ে পড়ে থাকা এসব উড়োজাহাজ গলার কাঁটা হয়ে আছে। চার কোম্পানির এসব উড়োজাহাজের জন্য পার্কিং সারচার্জের পরিমাণ ৮৫০ কোটি টাকা। কোম্পানিগুলো এ টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় এবং কার্যক্ষমতা নষ্ট হওয়ায় এসব বিমানকে অবশেষে নিলাম করেই বিক্রি করতে হচ্ছে।

গত ১১ বছরে এই ১২টি উড়োজাহাজের পার্কিং ও সারচার্জ বাবদ বকেয়া ৮৫০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বকেয়া জিএমজি এয়ারলাইন্সের। জিএমজির কাছে ৩৬০ কোটি টাকা পায় বেবিচক। আর রিজেন্ট এয়ারওয়েজের কাছে বেবিচকের পাওনা ২০০ কোটি টাকা, ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের কাছে পাওনা ৩৫৫ কোটি টাকা। এগুলো সরিয়ে নিতে মালিকপক্ষকে বারবার চিঠি দেওয়া হলেও পার্কিং ও সারচার্জ জমা দেওয়ার ভয়ে তারা সরিয়ে নেয়নি।

সর্বশেষ
logo
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকঃ তাপস রায় সরকার
মোবাইল: +৮৮০ ১৭৩৬ ৭৮৬৯১৫
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮
মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624
ইমেইল: tbtbangla@gmail.com (online), ads@thebangladeshtoday.com (adv) newsbangla@thebangladeshtoday.com (Print)
বাংলাদেশ টুডে কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram